অ আ আবীর আকাশঃ কোরবানি ঈদকে কেন্দ্র করে আমাদের দেশে করোনা লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। ফের কল কারখানা চালু রাখার নিমিত্তে করোনার কঠোর পরিস্থিতিতেও লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। এতে দেশকে রক্ষার দায়িত্বে যারা আছেন তারা তাদের স্বার্থ ছাড়া জনগণের জানমালের কথা কিঞ্চিৎ ভেবেছেন বলে মনে হলো না। এ কথাতে অনেকেই বেজার হতে পারেন, তাতে কুছ পরোয়া নেই। সুবিধাবাদীদের কাছে দেশ ও জনগণ যেন হাতের মোয়া। যেমন ইচ্ছে নাচিয়ে যাচ্ছেন। তারা দেশকে ক্ষেত্র ও জনগণকে শস্যদানা মনে করে তাদের উদ্ভট পাগলামো ইচ্ছেগুলোকে বুনে যাচ্ছেন। যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে, নিত্য নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে আবার রেকর্ড ভঙ্গ হচ্ছে, মৃত্যুর সংখ্যাও আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে সেখানে লকডাউন চলা সত্বেও কেনো শিথিলতা? কেনো জনগণ নিয়ে এই পুতুল খেলা? মোটেও বুঝে আসছেনা।
বাংলাদেশে করোনা নিয়ে চলছে তামাসা। লকডাউনের নামে চলছে হাসি ঠাট্রার নাটক। হাসতে হাসতে মানুষ মরে চারখার হচ্ছে। আহারে আইন কানুন, আহারে নীতিনির্ধারকরা!
দেশে করোনার কঠোরতম ধাপ চলছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে ফের রেকর্ড ভঙ্গ করছে। মৃত্যুহারও অনুরূপভাবে রেকর্ড সৃষ্টি করছে আর সে রেকর্ড ভঙ্গ করছে। পুরো দেশে করোনা পরিস্থিতি বর্তমান সময়ে টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দেশে কঠোর লকডাউন বা শাটডাউনের বিকল্প নেই। যদি জনগণ এতে সায় না দেয় ১৪৪ ধারা জারী করা যেতে পারে। এতেও কাজ না হলে সোজাসুজি কারফিউ জারি করা যেতে পারে। দেশের মানুষ রক্ষার্থে, মৃত্যুর হার কমাতে, পরিস্থিতি প্রতিবেশী দেশ ভারতের মতো যাতে না হয় সে জন্য আমি কারফিউ জারির পক্ষে। বাঙালিকে করোনা পরিস্থিতি বোঝাতে কারফিউ না দেয়া ছাড়া কোন রক্ষে নেই।
সরকারের ভেতর যারা নীতিনির্ধারক রয়েছেন তাদের কলকারখানা মিল-ইন্ডাস্ট্রিজ থাকায় তারা এই কঠিন পরিস্থিতির ভেতরেও এরকম উদ্ভট পাগলামো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন। যা তাদের স্বার্থের কাছে দেশ ও জনগণ মোটেও কোন ফ্যাক্ট নয়। যারা তাদের মিল ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করে তারা কোনো মানুষ নয়, শ্রমিক। আর শ্রমিকের জীবনের দাম আর কত! বড় জোর ২৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা! হায়রে দেশ! হায়রে জাতি!
রাষ্ট্রপ্রধান শেখ হাসিনা করোনা পরিস্থিতিতে একবারের জন্যও কোথাও কোন সভা বা মিটিংএ যোগ দেননি বা আয়োজন করতে বলেননি। নেত্রীও সংসদ ভবন ছাড়া আর কোথাও গণভবন থেকে বের হননি। পরিতাপের বিষয় হলো তাঁর চারপাশে থাকা আবর্জনাগুলো নেত্রীর সামনে সাধু সদবা সাজলেও, দাফনের কাপড়ের মতো সাদা পাঞ্জাবি পায়জামা পরে লেবাস কোট মানে মুজিব কোট পরে গেলেও বাহিরে এসে তার ঠিক উল্টো কাজকর্মগুলো করে থাকে।
নেত্রীর নির্দেশ মতো, স্বাস্থ্য বিভাগের জরুরী প্রয়োজনে দেশে করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপ মোটামুটি ভালোভাবে অতিক্রম করতে পারলেও তৃতীয় ধাপে এসে তা যেন এলোমেলো হয়ে পড়েছে। করোনা ব্যবস্থা নেত্রীর সামনে একরকম উপস্থাপিত হয় আর বাস্তবে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করছে নীতিনির্ধারকেরা। তা নিয়ে মিডিয়া কিছু যাতে না বলে সেজন্য আইন প্রণয়ন করে রাখা হয়েছে। তৃতীয় ধাপে করোনা পরিস্থিতি বাংলাদেশে চরম আকার ধারণ করলেও মিল কলকারখানা ইন্ডাস্ট্রি মালিকেরা তা যেন পাত্তাই দিচ্ছেন না। করোনায় মানুষ মরুক, না মরুক তাতে কিচ্ছু যায় আসেনা। শুধু মাত্র কোম্পানির মেইল ইন্ডাস্ট্রি কল কারখানা চালু থাকুক, টাকার পাহাড় গড়ে উঠুক, শ্রমিকের জীবন চলে যাক, ক্ষয়ে যাক তাতে অসুবিধা নেই। শ্রমিকদের জীবন সংসার তাদের বেতনের কয়েকটি টাকার কাছে বন্দী, জিম্মি। এই রকমই মনে হচ্ছে যে, মিল ইন্ডাস্ট্রিজের মালিকের কাছে শ্রমিকের জীবন বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। কারখানায় আগুন লাগবে তবু শ্রমিক বের হতে পারবে না। প্রয়োজনে কঙ্কাল গুণে নেবে মালিকেরা। কারখানায় আগুন লাগলে কলাপসিবল গেট, লোহার গেট, প্রধান গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়! কিন্তু কেনো? তার উত্তর অজানা। তাজরিন গার্মেন্টস, রানা প্লাজাসহ সম্প্রতি সেজান জুসের কারখানার চিত্র একই রকম। যে বা যারা তালা লাগানোর কাজটি করে তাদেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া উচিত নয় কি?
কঠোর লকডাউন চলমান থাকা অবস্থায় কোরবানির ঈদের কয়েকদিন আগে বিনে প্রয়োজনে লকডাউন শিথিল করে দিয়ে দেশে আশঙ্কাজনকহারে করোনা শনাক্তের হার বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য ঈদ পরবর্তীতে কঠোর লকডাউন দেয়া হয়েছে। ঈদে ঘরে ফেরা, গ্রামেগঞ্জে আসা মানুষগুলো থেকে করোনার বীজ ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামাঞ্চলে। এইটুকু বোঝার ক্ষমতা কি আমাদের সরকার পরিচালনা পরিষদের মধ্যে হয়নি?
ঈদ পরবর্তী লকডাউনের ভেতরে হঠাৎ সিদ্ধান্ত এলো মিল কলকারখানা ইন্ডাস্ট্রি খোলা। মানুষ ছুটছে হুড়মুড় করে। কিন্তু যাত্রীবাহী বাস বন্ধ থাকায় তাদের দুঃখ আরো চরমে পৌঁছলো। চাকরি বাঁচাতে যে যার মতো করে কুড়ি থেকে পঁচিশ গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে অসহায় মানুষগুলো কর্মস্থলে ছুটতে লাগলো। সবচেয়ে বেশি দুর্দশায় পতিত হলো নারী ও শিশু। গণমাধ্যমে এসেছে- বাচ্চা কোলে করে এক মা পায়ে হেঁটে ১৫০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ঢাকায় পৌঁছাল তার চাকরি রক্ষা করতে। আহারে জীবন!
কোথায় কার সামাজিক দূরত্ব? কে পরে কার মাক্স? জীবনের চেয়ে চাকরি বড়! পরিস্থিতি বেসামাল দেখে এবার লঞ্চ স্টিমার চলার অনুমতি দিয়েছে নীতিনির্ধারকেরা। তাদের কাছে মানুষের চেয়ে পুঁজিবাদী ও সুদি ব্যবসা বড়।
এবার করোনা পরিস্থিতি এতটাই প্রকট আকার ধারণ করতে চলেছে যে, কিভাবে সরকার তা সামাল দিবে, আল্লাহ মালুম। যেসব লোভী সুদি ব্যবসায়ীদের কথায় মিল ইন্ডাস্ট্রি কল কারখানা খুলে মানুষের বাঁধভাঙ্গা ঢল তৈরি করেছে সে সবেরা কি বলবে? বাংলাদেশ কি সত্যিকার অর্থে ভারত পরিস্থিতির কাছাকাছি পৌঁছে গেলো?
বিভাগীয় কয়েকটি হাসপাতাল ও ঢাকা শহরের কয়েকটি করোনা হাসপাতালের রিপোর্ট নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ বুলেটিন প্রচার করে, তার বাহিরে প্রকৃত হিসাব তুলে ধরবে কে? অন্যদিকে এই করোনা পরিস্থিতির ভেতরে অন্য রোগীদের চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হওয়ার ফলে বহু নিরীহ, অসহায় মানুষের মৃত্যু হয়েছে! বহু মানুষ বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে মরছে! মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সে সবের হিসাব কে রাখছে?
ঈদের আগে ও পরে করোনার কঠোর পরিস্থিতির ভেতরে লকডাউন শিথিল করে দেশের ভেতরে হাউকাউ সৃষ্টি করে, অসহায় মানুষ করোনা আক্রান্ত ও মারা যাওয়ার দায়ভারকে নেবে? দেশের নীতিনির্ধারকরা এর জবাব কী দিবেন?
ক্ষয়ে যাওয়া একটি জীবনের দাম দেয়ার ক্ষমতা কি কারখানা মালিকের আছে না কি আওয়ামীলীগ সরকারের আছে? তাহলে এ প্রহসন কেনো? লকডাউন, শাটডাউন বা কঠোর লকডাউনের মানে কি? কেনো এসবের মিছেমিছি নাটকের মঞ্চায়ন?★
লেখক কবি কলামিস্ট ও সাংবাদিক।
সম্পাদকঃ আবীর আকাশ জার্নাল