অ আ আবীর আকাশঃ সংবাদ লেখা ও সাংবাদিকতায় সারাদেশে চাটুকার, প্রতারক, মিথ্যাবাদী ও অশিক্ষিত, মূর্খরা অনুপ্রবেশ করছে। এই নিয়ে প্রকৃত সংবাদ ও সাংবাদিকতা প্রশ্নাতীতভাবে জৌলুস হারাচ্ছে এবং নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। শহরের তুলনায় এর প্রভাব জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি লক্ষণীয়। আবার জেলার চেয়ে উপজেলা সমূহে আধিপত্যতা বেশি। কারণ জেলাতে প্রশাসনিক চাপের মুখে অপসাংবাদিকতা টিকতে পারেনা। উপজেলা পর্যায়ে গ্রামাঞ্চলে, চরাঞ্চলে নদনদীর দুর্গম এলাকা কেন্দ্রিক অপসাংবাদিকতা, মিথ্যাবাদী, প্রতারকগোষ্ঠীরা সঙ্গবদ্ধ হয়ে তাদের অসৎ কার্যকলাপ চালিয়ে যায়।
‘সাংবাদিকতা বা সাংবাদিক কাকে বলে’এর নূন্যতম কাণ্ডজ্ঞান না থাকলেও নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে স্বার্থ হাসিল করার ধান্দায় তারা এত চটুল, ঠিক, প্রতারণার আশ্রয় নেয় যে তাদের কাছে সকল সাংবাদিক গণমাধ্যম কোণঠাসা। এমন ভাবে তারা নিজেদের উপস্থাপন করে যে, তাদের ভাবসাব দেখলে মনে হবে দেশের সকল গণমাধ্যম তাদের কথায় উঠবস করে। আসলে এসব পাকনা কথা তারাই বলে যারা প্রকৃত অর্থে মিথ্যাবাদী, ভুয়া অপসাংবাদিকতা করছে।
এরা সংবাদ সাংবাদিকতার বাহিরে রাজনৈতিক কথাবার্তাই বেশি বলে। নিজেদের অমুক নেতা, তমুক নেতার কাছের লোক বলে পরিচয় দেয়। আবার মাঝেমধ্যে নিজেরাও রাজনৈতিক পদে আসীন বলে জানান দেয়। এরা যে সত্যিকারের ভুয়া, প্রতারক সাংবাদিক তার প্রমাণ এগুলোতেই যথেষ্ট। কারণ প্রকৃত সাংবাদিক কোনো দলের নয়। সে কখনো কোনো ব্যক্তি বা দলের কোনো পরিচয় বহন করবে না। অমুকের আত্মীয় বা কাছের লোক বলে পরিচয় দেবে না। এসব একমাত্র প্রতারকরাই করে থাকে।
অশিক্ষিত, মূর্খ সাংবাদিকতা দিন ফুরিয়ে শিক্ষিত, স্মার্টদের হাতে যাচ্ছে তৃণমূল সংবাদ ও সাংবাদিকতা। আইন পাস হয়েছে, বাস্তবায়ন হতে সময়ের ব্যাপার মাত্র। স্নাতক পাস ছাড়া কেউ আর সাংবাদিকতা করতে পারবে না। ইতোমধ্যে যারা ভুয়া কাগজপত্র সৃজন করে ঢাকার অখ্যাত বিখ্যাত পত্রিকার জেলা উপজেলা প্রতিনিধি সেজেছে তাদেরও কাগজপত্র যাচাই-বাছাই হবে স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকৃত কাগজপত্র তলব হতে পারে বলে একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
কিছু সুবিধা দিয়ে কার্ড এনে গলায় ঝুলিয়ে যাকে-তাকে হেনস্থা করার দিন আর নেই। ভুয়া অপসাংবাদিকতার দিন শেষ। যারা সংবাদ লিখতে জানেনা, ভাষা ব্যবহার জানে না, ন্যূনতম সাহিত্যের যোগ নেই, কথায় রস নেই, পুরো আঞ্চলিকতায় কথা বলে, শুদ্ধ করে কথা বলার চর্চা নেই বা পারে না, তাদের মুখোশ খুলে পড়ছে কেবলই। চোর, বাটপার, চিটার, টাউটের দিন শেষ।
মফস্বল সাংবাদিকতায় এতদিন সরাসরি শিক্ষিত, স্মার্ট তরুণ-তরুণীরা না এলেও ক্রমান্বয়ে আসতে দেখে অনেক বুড়া-জোয়ান এর গায়ে জ্বালা ধরেছে। কারণ তারা এতদিন পত্রিকা, টিভি চ্যানেল আঁকড়ে ধরে আরেকজনের লেখা কপি করে, আরেকজনকে দিয়ে ভিডিও ফুটেজ তৈরি করে নিজের নামে স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানে চালিয়ে দিতেন। সে কপি করার দিন শেষ! এবার শিক্ষিত তরুণ-তরুণীর দিন শুরু। নতুনেরে করে দিতে হবে স্থান। স্মার্ট, শিক্ষিতদের দিন শুরু।
শিক্ষিত, স্মার্ট নতুনের আগমনে অনেকের গা জ্বালা শুরু হয়েছে বৈকি। তারা নতুনদের হুমকি মনে করে। এজন্য নতুনদের পত্রিকা, টিভি চ্যানেল বা অনলাইন ও প্রতিদিনকার ঘটনা নিয়ে সংবাদ থাকা সত্বেও তাদের ‘ভুয়া সাংবাদিক’ বলে চাপিয়ে দিতে চায় বা নানা ঝামেলা সৃষ্টি করে দমিয়ে দিতে চায়। আসলে বৃথা চেষ্টা করে লাভ কী! এই নতুনেরা সব জেনেশুনে বুঝেই এসেছে যে, সংবাদ সাংবাদিকতায় প্রচুর ঝুঁকি রয়েছে। হুমকি-ধামকির ঝামেলা এমনকি মামলা-হামলাও রয়েছে। তারা এসব কে ‘কুচপরোয়া না করেই’ এই জগতে পা রেখেছে। তাই নতুনেরা জয় করবেই করবে। নিপাত যাবে যত অসৎ, অসভ্য, অশিক্ষিত সাংবাদিকের বাগাড়।
যত্রতত্র হাওয়া মারা, তেল মারা, কথার হুল ফোটানো, ভুয়া, সাংবাদিক নামধারীরা গ্রামাঞ্চলে চষে বেড়ায়। কেউ কেউ আবার গোষ্ঠী সৃষ্টি করে সাধারণ জনগণকে হুমকি-ধামকির উপরে রাখে। এইসব অপদার্থদের প্রতিহত করার জন্য আইন প্রণয়ন হয়েছে। প্রতিহত করতে হবে শিগগিরই। সাংবাদিক না হয়েও যারা নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিচ্ছে, তাদের প্রতিহত করার জন্য বাংলাদেশ সরকার আইন জারি করেছে। সঠিক তথ্য পেলে এসব ভুয়া ও অশিক্ষিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথা প্রশাসন।
সাধারণ জনগণ বুঝে গেছে, ‘কাক ময়ূরপুচ্ছ লাগালে ময়ূর হয়ে যায় না।’ যার ভিতরে আলো নেই তার বাহিরের বেশভূষায় সাধারণকে আকৃষ্ট করার বৃথা চেষ্টা করে লাভ কি!
পুনশ্চঃ মফস্বল সাংবাদিকতা করতে হলে ন্যূনতম এইচএসসি পাস হতে হবে।