বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের দরুন পৃথিবীব্যাপী লকডাউনের জালে বন্দি হওয়ার কারণে মানবসভ্যতা বাঁচানোর অতীব জরুরী তাগিদে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে। গত বছর এমন সময় চীন দেশে উৎপন্ন হয়ে দ্রুত মানুষের ভর করে এই মরন ব্যাধি করোনা পৃথিবীময় ছড়িয়ে যায়। সবকিছুর সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ হয়ে যায়। লক্ষ্য করলে দেখতে পাবো যে, পৃথিবীর সকল কার্যক্রম সচল হয়ে ‘অবনী’ তার পূর্বের রূপে ফিরে যাচ্ছে কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার নাম নেই। করোনাভাইরাসের বাংলাদেশ অংশে একের পর এক তারিখ দিয়ে বন্ধ রেখে ২০২০ সাল মানে একটি বছর পার করে দেয়া হয়েছে।
স্কুল কলেজ মাদ্রাসাসহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার দরুন শিক্ষার্থীদের মেধায় মরিচা পড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শুধু শিক্ষার্থীরাই নয় শিক্ষকেরাও সব কান্ডজ্ঞান ভুলে যেতে বসেছে। শিক্ষকদের অনেকেই উঠে-বসে থাকতে-থাকতে বিভিন্ন রকম রোগ ব্যারামে ভোগা শুরু করেছেন।
শিক্ষার্থীদের মেধা মননে বিরূপ মনোভাবের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রাইমারি ও হাইস্কুল মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়তে শুরু করেছে। পড়ালেখা ছেড়ে বইপত্তর থেকে দূরে থাকার দরুন লকডাউনের সময় তাতে মোবাইল টিপাটিপি করে সময় পার করলেও বর্তমান সময়ে এসে তারা বিভিন্ন রকম কাম-কাজে লেগে গেছে। ‘অটো পাস’ করিয়ে দেয়ার যে অপসংস্কৃতি শুরু করেছে সরকার তাতে করে আগামীর বাংলাদেশ পরিচালনায় তারা কি ধরনের ভূমিকা রাখবে তা আঁচ করা যাচ্ছে এখনই!
করোনা ভাইরাসের কারণে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের শেষ সময় পর্যন্ত এমন কোনো কাজ বা প্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে? শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি উত্তর দিতে পারবেন বোধহয়। আকাশপথ সড়কপথ রেলপথ নৌপথ, দেশে-বিদেশে মিল কলকারখানা, সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান চালু হয়েছে। কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষেরা। রাজধানীর বুকে বাড়ছে ভীড়াভীড়ি। লোকাল বাসে করোনাভাইরাস নেই, রাজনৈতিক মিছিল-মিটিং উৎসব মেলা আয়োজন প্রদর্শনীতে করোনাভাইরাস নেই, তা কি শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেগে আছে? এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও টিউশনি, প্রাইভেট, কোচিং প্রাইভেট মাদ্রাসা, কিন্ডারগার্টেন অমুক-তমুক কিছুই বাদ নেই। হাট বাজার শপিং কমপ্লেক্স দোকানপাট আড্ডা রেস্তোরাঁ হোটেল-মোটেল বোর্ডিং চাইনিজ ক্যাফে কোনটা বন্ধ আছে! না, কোনটাই যখন বন্ধ নেই তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার উদ্দেশ্য কী হতে পারে তা আমার বোধগম্য নয়।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীক জেলা-উপজেলা বা বিভাগীয় দপ্তর অধিদপ্তর বোর্ড সবই তো খোলা আছে, সরকারি আধা-সরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সচিব উপসচিব শিক্ষামন্ত্রী নিজেও তো অফিস করছেন, বেতন-ভাতা তুলছেন কাগজ পত্রে স্বাক্ষর করছেন সেখানে তো নেই এটা কেবল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য অতীব জরুরী নিয়ম?
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের কি দশা আজ জাতি উপলব্ধি না করলেও অদূর ভবিষ্যতে জাতি হাঁড়ে হাঁড়ে টের পাবে। অটো পাশের যে মহা ভাইরাসের ভেতর দিয়ে শিক্ষার্থীদের এগিয়ে নেয়া হচ্ছে তা কি করে, কোন উপায়ে শোধরাবে তা জানা নেই।
এ জাতিকে ধ্বংস করার নিমিত্তে অটো পাস নামে যে সংস্কৃতি সামনে এসে দাঁড়িয়েছে তা শতভাগ ‘আত্মঘাতীমূলক’ বলে মনে করি। যাচাই না করে পাশের নামে শিক্ষার্থীদের প্রমোশন দেয়া কতটুকু যুক্তিযুক্ত?
বন্ধ থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে খোলার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে সপ্তাহে মাত্র একদিন শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানে যেতে হবে। অবশ্য দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের সপ্তাহে প্রতিদিন ক্লাস হবে। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এ বছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
তবে বিশেষ কথা হলো পরীক্ষা ছাড়াই এইচএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ করতে চলেছে সরকার। পরীক্ষা ছাড়াই ‘আজগুবি’ ফলাফল প্রকাশ কোথা থেকে, কিভাবে হবে সুস্পষ্টভাবে জানা যায়নি। আইন সংশোধন করে জাতীয় সংসদে বিল পাসের মধ্য দিয়ে পরীক্ষা ছাড়াই এইচএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশের বাধা দূর করা হয়েছে বলে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
সকল কথার একটি কথা হলো- স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ পূর্ণাঙ্গরূপে সচল করা যেতে পারে নির্দ্বিধায়। যেহেতু করোনা ভয়ে কোন প্রতিষ্ঠান আজ পর্যন্ত বন্ধ নেই সেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ‘খড়গ’ কেন? সকল বাধা-নিষেধ দূর করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অচিরেই সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার তাগিদ অনুভব করছি। শিক্ষার্থীদের টেকসই শিক্ষা ও মানোন্নয়নের প্রশ্নে এবং শিক্ষার্থীদের বিপথগামী থেকে রক্ষা করতে আগামীর ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কারিগর ‘আজকের শিক্ষার্থীদের’ শিক্ষায় সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে অল্পসময়ের মধ্যেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার আহ্বান জানাই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষাবিভাগ তথা সংশ্লিষ্ট সকল অধিদপ্তর এমন কি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও নীতিনির্ধারকদের প্রতি।
লেখকঃ কবি প্রাবন্ধিক কলামনিস্ট ও সাংবাদিক।
সম্পাদকঃ আবীর আকাশ জার্নাল