।।ব্যারিস্টার আবুল কালাম চৌধুরী।।
বিমানের সরাসরি লন্ডন-সিলেট ফ্লাইট বাতিল নিয়ে সম্প্রতি ব্রিটেন প্রবাসীদের মাঝে মারাত্মক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে যা বলা হচ্ছে- ফ্লাইট বাতিল হয়নি, করোনার জন্য যাত্রী সংখ্যা কমে যাওয়ায়, সাময়িক ভাবে ঢাকায় স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে, ঢাকায় যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন করে, অভ্যন্তরীন ফ্লাইটে সিলেট পাঠানো হচ্ছে। সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে।
করোনা নিয়ে সবাই কম বেশী তটস্থ। বিমানের সরাসরি আয়েশী ভ্রমণের চাইতে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। তাই প্রশ্ন হলো – করোনা থেকে যাত্রীদের নিরাপদে রাখার জন্য এতো বড় একটি পদক্ষেপ নিলেন, আর যাত্রীরা তার বিপরীতে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন, প্রতিবাদ করছেন কিংবা বিরোধিতা করছেন কেন?
আমার মনে হয়েছে বিষয়টি অন্যান্য মন্ত্রণালযের সাথে সঠিক ভাবে পরামর্শ কিংবা অবহিত করা হয়নি। বাতিল করার আগে বাস্তবতা অনুধাবন করা হয়নি। এখানে মারাত্মক সমন্বয় হীনতার অভাব ও পরিলক্ষিত। এমনকি বিষয়টি নিয়ে কোন প্রকার প্রেসনোট কিংবা প্রেসরিলিজ ও দেয়া হয়নি। জনগণ যতটুকু জেনেছে অনলাইন নিউজ পোর্টাল থেকে বিক্ষিপ্ত ভাবে। সঠিক প্রেসনোটের অভাবে যে যার ইচ্ছামতো নামে বেনামে সোশ্যাল মিডিয়ায় সংবাদ পরিবেশন করেছে। মোটকথা কর্তৃপক্ষ সঠিক ভাবে বিষয়টি জনগণের সামনে তুলে ধরতে ব্যার্থ হয়েছেন। তাই প্রশ্ন হলো – এর দ্বায় ভার কার?
বিমানের দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট ভাঙতে বর্তমান সরকার দীর্ঘদিন থেকে কাজ করছেন। ইতিমধ্যে বেশ কিছু দুর্নীতিবাজকে আইনের আয়তায় নিয়ে আসা হয়েছে। যারা যুগের পর যুগ বিমান থেকে দুর্নীতি করে হাজার কোটি টাকা বানিয়েছে। এই সরকারের আমলেই বিমান সৃষ্টির পর থেকে প্রথম বারের মতো লোকসান নয় বরং মুনাফা করেছে। বিমানে নতুন নতুন এয়ার ক্রাফট যুক্ত হয়েছে। আমার ধারণা করোনাকে পুঁজিকরে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এই চিহ্নিত সিন্ডিকেট সুপরিকল্পিত ভাবে সরকারকে অন্ধকারে রেখে এটি ঘটিয়েছে। বিগত কোরবানির ঈদে হজের ফ্লাইট বাতিল করে সরকার ফেলতে উত্তরা ষড়যন্ত্রের কথা আমাদের মনে আছে। সুতরাং এটি যে তাদের কাজেরই একটি অংশ তা এখন দিবালোকের মতো পরিষ্কার। অত্যন্ত পরিকল্পিত ভাবে তারা সরকারকে বিব্রত করতে এই কাজটি করেছে।
আমি ব্যাক্তিগত ভাবে যতটুকু জেনেছি কিংবা বুঝার চেষ্টা করেছি। যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগ কিংবা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিমানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী অথবা প্রবাস বিষয়ক মন্ত্রী সবাই বিমানের লন্ডন – সিলেট ফ্ল্যাটের ব্যাপারে আন্তরিক। বিমানের সাময়িক এই ফ্লাইট বাতিল কোন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়। বরং আমলাদের মনগড়া সিদ্ধান্ত। তথাপি সরকারের দ্বায় এড়ানোর কোন সুযোগ নাই। যেহেতু সিলেটে সরকার অনুমোদিত করোনার আইসোলেশন সেন্টার রয়েছে এবং করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা ও রয়েছে, সেহেতু বিমান যাত্রীদের ঢাকায় না আটকিয়ে সরাসরি সিলেটে নিয়ে পরীক্ষা করতে কোন অসুবিধা হবার কথা নয়। ইতিমধ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। জনগণের বিভ্রান্তি দূর করাতে বিষয়টি শীঘ্র সমাধানের জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
ব্যারিস্টার আবুল কালাম চৌধুরী
প্রিন্সিপাল সলিসিটর, কেসি সলিসিটর্স লন্ডন।