বানারীপাড়া সংবাদদাতাঃ বরিশালের বানারীপাড়ায় উদয়কাঠি ও বাইশারী ইউনিয়নে দু’টি আয়রণ ব্রিজ নির্মাণের জন্য জেলা পরিষদ থেকে লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। মাত্র চারটি করে পুরনো লোহার খুঁটি পুতে ‘লোহার ব্রিজের’ স্থলে ‘সুপারি গাছের সাঁকো’ নির্মাণ করে ওই অর্থ লোপাটের খবরে যখন তোলপাড় চলছে ঠিক তখন বানারীপাড়া উপজেলা বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট ও অনুশীলণ সাংস্কৃতিক সোসাইটির নামে লাখ টাকা বরাদ্দ নিয়ে লোপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বরিশাল জেলা পরিষদ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে সংগঠনের নামে লাখ টাকা বরাদ্দ নিয়ে পৌর যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক ও পৌর ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান ফকিরদের মালিকানাধীন ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি ভাড়াটিয়া কক্ষের দরজার নিচের অংশে নামফলক সাঁটিয়ে প্রকল্পের ওই টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। নাম ফলকটি এমনভাবে সাঁটানো হয়েছে যাতে কারও সহজে নজরে না পড়ে।
প্রকল্পের টাকা তুলতে কাজ সম্পন্ন শেষে নামফলকের ছবি তুলে জেলা পরিষদে জমা দিতে হওয়ার প্রয়োজনে নামফলকটি সাঁটানো হয়েছে। যুবদল নেতার মালিকানাধীন ভবনে অন্যের ভাড়া নেওয়া কক্ষের দরজার নিচে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের নামে নেওয়া লাখ টাকার বরাদ্দ লোপাট করতে নামফলকটি সাঁটানো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ওই নাম ফলকে প্রকল্প সভাপতি হিসেবে উপজেলা বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শরীফ উদ্দিন আহমদ কিসলুর নাম রয়েছে। এমন একটি পোষ্ট ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
যার প্রেক্ষিতে শনিবার ৩১ জুলাই সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানা ও সাংগঠনিক সম্পাদক সুজন হালদার স্বাক্ষরিত সংগঠনের একটি পত্রে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রকল্পের ঠিকাদারী/ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান নয়। সংগঠনটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মহান আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পথচলা একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন। এর বাহিরে গিয়ে সংগঠনের নাম ভাঙ্গিয়ে শরীফ উদ্দিন আহমদ কিসলূ বরিশাল জেলা পরিষদ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে লাখ টাকার একটি প্রকল্পের সভাপতি হন। প্রকল্পের সভাপতি হয়ে বানারীপাড়া পৌর শহরে যুবদল নেতার মালিকানাধীন ভবনের একটি রুমের দরজার নিচের অংশে কেবলমাত্র নামমফলক সাঁটিয়ে বরাদ্দের ওই লাখ টাকা কি করেছেন তা স্পষ্ট নয়।
ফলে প্রকল্পের অর্থ ব্যয় করার ক্ষেত্রে অনিয়ম ও দূর্নীতির প্রাথমিক অভিযোগ পাওয়া গেছে বলেও ওই পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। পত্রে বিষয়টি অনুসন্ধান করে বরিশাল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রকল্পের ওই সভাপতির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানানো হয়েছে। কার্যার্থে ও ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অনুরোধপত্র প্রেরণ করা হয়েছে, বরিশাল জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, বানারীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান, বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বানারীপাড়া বরাবরে। সদয় অবগতির জন্য অনুলিপি প্রেরণ করা হয়েছে বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. শাহে আলম,পৌর মেয়র, উপজেলা বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটেরর সভাপতি/ সম্পাদক ও বানারীপাড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি/ সম্পাদক বরাবরে।
এ বিষয়ে ওই প্রকল্পের সভাপতি ও উপজেলা বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি এবং উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শরীফ উদ্দিন আহমদ কিসলু বলেন, ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে শিশু-কিশোর সমাবেশ ও বাদ্যযন্ত্র ক্রয়ে জেলা পরিষদের বরাদ্দের ওই টাকা তখন ব্যয় করা হয়েছিল।
এ ব্যাপারে বানারীপাড়া উপজেলা বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ওয়াহীদুজ্জামান দুলাল বলেন, প্রকল্পের টাকা প্রকল্পের কাজেই ব্যয় করতে হয় অন্য কোন খাতে ব্যয় করার সুযোগ নেই।।
এ প্রসঙ্গে বরিশাল জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক (ডিডিএলজি) মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, এ সংক্রান্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। পেলে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।