করোনাভাইরাস যেহেতু ছোঁয়াচে, হাঁছি কাশির মাধ্যমে ছড়ায় সেহেতু এর উচিত সমাধান হচ্ছে মানুষের কাছ থেকে মানুষ দূরে থাকা। ঠেলাঠেলি, সভা-সেমিনার এড়িয়ে চলা। অহেতুক আড্ডায় যোগ না দিয়ে একা একা থাকা। সরকারের পক্ষ থেকে এর কার্যকর পদক্ষেপ হচ্ছে লকডাউন, শাটডাউন দেয়া।এটি কার্যকর না হলে মানুষের জরিমানা, যানবাহন হলে মামলা দেয়া ও অর্থদণ্ড করা। আর এতেও যদি কাজ না হয় তাহলে বিশেষ জরুরী ঘোষণায় কারফিউ জারি করা।
বেশিদূর দেখাবো না, প্রতিবেশী দেশ ভারত কি ভয়ানক অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে! তাদের করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হওয়া লাশের মিছিল এত দীর্ঘ ছিল যে, তারা আত্মীয় স্বজনের লাশ নদীতে ফেলে দিতেও দেখা গেছে। হায়! এর ভেতরে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ কমপক্ষে ৭০ টি বিভিন্ন গ্রুপ শনাক্ত হয়েছে। তন্মধ্যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সহ কয়েকটি ভাইরাস খুবই বিপদজনক। ব্লাক ফাঙ্গাস এটাও ছোঁয়াচে, দ্রুত ছড়ায় এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যে রোগীর মৃত্যু হয়।
করোনার জরুরি অবস্থার ঘোষণার ভেতরে আবার ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নিয়েও জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে হয়েছে ভারতকে। ব্ল্যাক ফাঙ্গাস এতটা অতি বিপদজনক যে, এ ছোঁয়াচে ভাইরাস শরীরে যেখানটাতে উদয় হয় সে স্থান কেটে ফেলতে হয়। বেশিরভাগ এই ছোঁয়াচে রোগের আক্রমণের শিকার হয় চোখ। তাতে করে দ্রুত সময়ের মধ্যে চোখ উপড়ে না ফেললে রোগীর মৃত্যু অনিবার্য।
এতসব বিপদজনক ভাইরাসের আক্রমনের শিকার প্রতিবেশী দেশ ভারত। বাংলাদেশের তিন দিকে ভারত হওয়ায় অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে বাংলাদেশের নাগরিকদের। আমরা যারা একটু-আধটু লেখালিখি করি এ লেখার মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের উদ্দেশ্যে বলি ‘বর্ডার জোরদার করার জন্য’। কোন অবস্থাতেই যেন মানুষ, গরু, মহিষ, ভেড়া বা অন্য কোনো প্রাণী আসা-যাওয়া না করতে পারে। সেজন্য বর্ডার গার্ড শক্ত ও কঠোর হতে হবে। প্রয়োজনে আইনের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে। কারণ একজন দুজন মানুষের জন্য তো আর পুরোদেশ বিপদের মুখে ঠেলে দেয়া যায় না। বর্ডার গার্ড যদি এতে বিন্দু পরিমাণ দায়িত্ব পালনে অবহেলা করে তাতে করে বাংলাদেশে বয়ে যেতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা! যার কোন সীমা থাকবেনা।
দেশে করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউ সুন্দরভাবে অতিক্রম করলেও তৃতীয় ধাপে চলছে সীমা অতিক্রমের পালা। কারণ প্রথম ধাপে মানুষজন ভীত ছিল, দ্বিতীয় ধাপে ভয় কিছুটা কমলেও তৃতীয় ধাপে এসে ভয় স্থিমিত হয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ মাক্স পরা অনাগ্রহী হয়ে পড়েছে। এতে করে দিন দিন এর সংক্রমণের হার বেড়েই চলছে এবং অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করতে শুরু করেছে। দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে যে, মৃত্যুর রেকর্ড আশঙ্কাজনকহারে দিনকে দিন বেড়ে যাচ্ছে আহারে! কার মায়ের বুক খালি হচ্ছে? কোন বোন বিধবা হচ্ছে? কত সন্তান জানি পিতৃহারা হচ্ছে, মাতৃহারা হচ্ছে? কারা জানি স্বজনহারা হচ্ছে! শুধুমাত্র অবহেলার দরুন সতর্ক না হয়ে, মাক্স না পরে তারা আজ নিজেরা যেমন শেষ হয়ে গেল অন্যদেরও ভাসিয়ে গেল শোক ও বেদনার সাগরে।
এই দুর্যোগকালীন সময়ে এবার লকডাউন না দিয়ে সরকার শাটডাউন ব্যবহার করেছে। কার্যত ফল উত্তমরূপে ভালো না হলেও বিফলে যায়নি। তবে এই শাটডাউন শিথিল করে দিয়ে সরকার চরম বিপর্যয় ডেকে আনছে না তো?
ঈদে ঘরমুখো মানুষের স্রোত গ্রামাঞ্চলে ছুটে যাচ্ছে। এতে করে বিপদ এবার গ্রাম পর্যায়ে পৌঁছে যাবে অনায়াসে। আল্লাহ না করুক, ভারতের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি যদি ঘটে কিভাবে সামাল দিবে বাংলাদেশ? যেখানে শাটডাউনের ভেতরে থেকে প্রতিদিন করোনা ভাইরাস শনাক্তের সংখ্যা ও মৃত্যুর সংখ্যা নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে সেখানে এই সাটডাউন শিথিল করে মানুষের ঢল ছেড়ে দিয়ে কি ভয়ানক পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে বাংলাদেশ!
কোন উপদেষ্টার উপদেশে, কার পরামর্শে এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার? তারা কারা? এমন দুর্যোগকালীন সময়ে দেশের পরিস্থিতি আরও করুণ করার জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিতে পারে! বাংলাদেশের আইন শৃংখলা, জননিরাপত্তার দিকে খেয়াল না করে ঈদ উদযাপনকে প্রাধান্য দিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া বোধহয় বোকামি। মানুষ বেঁচে থাকলে ঈদ জীবনে বহুবার পাবে। কিন্তু একবার যে জীবন চলে যাবে সে কি আর ফিরে আসবে? তার পরিবারে কি ঈদের আনন্দ হবে?
কঠিন দুর্যোগকালীন মুহূর্তে ঈদে ছুটি দিয়ে ও শাটডাউন শিথিল করে বাংলাদেশকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়া কি জরুরী ছিল?
লেখকঃ কবি প্রাবন্ধিক কলামিস্ট ও সাংবাদিক।
সম্পাদকঃ আবীর আকাশ জার্নাল।