বিশ্বনাথ সংবাদদাতা- সিলেটের বিশ্বনাথে ঘটনার দিন সন্ধ্যায় বন্ধুদের সাথে ‘ফূর্তি’ করতে একটি বাসায় যায় ইমরান আহমদ সায়মন (২৪)। ওই বাসার জনৈক নারীর কাছে যাতায়াত ছিল তাদের। সায়মন ভেতরে প্রবেশ করলে গেটে অবস্থান নেয় তার তিনবন্ধু।এসময় সেলফোনে ভিডিও ধারণ করে গেট অতিক্রম করে, পরিচিত আগনতুক যুবক। ভেতরেও যায় সে। বিষয়টি জানতে পেরে বেরিয়ে আসে সায়মন।
নিজের কোমরের বেল্ট টেনে টেনে, ভিডিও ধারণের কারণ জানতে চেয়ে চড়া হয় আগনতুকের উপর। তখনও ভিডিও করছিল আগনতুক। এ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিলে, এক পর্যায়ে সায়মনকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় আগনতুক ও তার এক সহযোগি।ঘটনার সময় ধারণ করা দু’টি ভিডিও চিত্র থেকেসম্প্রতি জানা গেছে এ তথ্য।
ঘটনার পর সায়মনের বন্ধুরা বিষয়টিকে আড়াল করেছিনতাই’র নাটক সাজায়। তবুও শেষ রক্ষা হয়নি কারো। ওইদিনই তিনবন্ধুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে একে একে খুনিসহ পাকড়াও করা হয় আরও দু’জনকে। উদ্ধার করা হয় হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুরিও।ঘটনাটি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার। গেল ২০ মার্চ সন্ধ্যা রাতে উপজেলা পরিষদ সড়কে খুন হয় সায়মন।
সে জানাইয়া দক্ষিণ মশুলা গ্রামের মছলন্দর আলীর ছেলে। এ ঘটনায় সায়মনের বড় ভাই ময়নুল ইসলাম সুমন বাদী হয়ে, একই গ্রামের মনোহর আলীর ছেলে এনাম উদ্দিন (২৩), মোস্তাব আলীর ছেলে তাহিদ আলী (২৪), আবদুল মছব্বিরের ছেলে আফজাল হোসেন লায়েক (১৯), মৃত তাহির উল্লাহর ছেলেফয়েজ আহমদ (২৪) ও তোরাব আলীর ছেলে তারেক আহমদ (২১)কে আসামি করে মামলা দেন যার (নাম্বার-২৭, তাং-২২.০৩.২১)।
ঘটনা সংশ্লিষ্ট দু’টি ভিডিও চিত্র পর্যালোচনা ও অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলা পরিষদ সড়কের উস্তার আলীর বাসায় ভাড়া থেকে তার সহায়তায়, সুমি নামের জনৈক নারী অনৈতিক কর্মকান্ড চালিয়ে আসছিল। ওই বাসায় যাতায়াত ছিল সায়মন ও এ ঘটনায় জড়িত সকলের। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় সায়মন বাসায় গেলে, গেটের কাছে দাঁড়িয়ে ছিল তার বন্ধু ফয়েজ, লায়েক ও তারেক।
এসময় মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে প্রবেশ করে খুনি এমান উদ্দিন ও তার সহযোগী তাহিদ আলী। খবর পেয়ে বাহিরে এসে ভিডিও ধারণ নিয়ে তাদের সাথে ঝগড়া হয় তার। এক পর্যায়ে তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় এনাম ও তাহিদ। পরে সায়মনের তিনবন্ধু এ টিকে ছিনতাইয়ে রূপদিয়ে নিজেদের রক্ষার অপচেষ্ঠা চালায়। পারস্পরিক কথা-বার্তায় সন্দেহ হলে তাৎক্ষণিক তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ।
এরপর খুনিসহ অন্য আসামিরা ধরা পড়লেবেরিয়ে আসে খুনের প্রকৃত রহস্য। খুনি এনামের মোবাইল থেকে উদ্ধার করা হয় ৫১ সেকেন্ডের একটি ও ১ মিনিট ৫৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও চিত্র উদ্ধার করা হয়। ভিডিও থেকে হত্যাকান্ডের সময় ও ঘটনা সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতি সম্পর্কেনিশ্চিত হয় পুলিশ। সম্প্রতি এ ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় আত্মগোপনে থাকার বাসার কেয়ারটেকার উস্তার আলীকেও।সে জানাইয়া গ্রামের মৃত মনা উল্লাহর ছেলে।
এর আগে জানাইয়া গ্রামের নুপুর নামের এক নারীকে আটক করলেও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয় পুলিশ।স্থানীয় সূত্র জানায়, উস্তার আলী, জনৈক সুমি ও নুপুর নামের দুই নারী মিলে ওই এলাকায় অপর্কম চালিয়ে আসছিল। তারা এলাকার যুব সমাজকে বিপথগামী করছিল।
তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে এই হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। খুনি এনাম উদ্দিন গংরা অপকর্মের ভিডিও চিত্র ধারণ করে মানুষকে জিম্মি করে উৎকোচ আদায় করতো। সায়মনের বেলায় এমনটি করতে চাইলে, এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে।এ বিষয়ে কথা হলে বিশ্বনাথ পুলিশ স্টেশনের অফিসার ইন-চার্জ গাজী আতাউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, প্রধান আসামিসহ মামলায় অভিযুক্তদের ইতিপূর্বে গ্রেফতার করেজেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। ঘটনা সংশ্লিষ্ট দু’টি ভিডিও চিত্রসহ, সার্বিক বিষয়ে পর্যালোচনা চলছে বলে তিনি জানান।