অ আ আবীর আকাশঃ এখন শীতকাল। শীত ঋতুতে অনেক রকমের ফুল ফোটে। তন্মধ্যে সরিষা ফুল পথচারীদের মন আকৃষ্ট করে। দূর বহুদূর থেকে অদেখা কোন চোখ কিবা যুবকের মন ছুঁয়ে যায়। যতদূর চোখ যায় যেন হলুদ এক নদী একে-বেঁকে বয়ে চলেছে। অথবা সবুজ মাঠের বুকে দিগন্তজুড়ে বিছানো কোনো হলুদরঙা কার্পেট। শীত আর সরিষাফুল যেন একে অন্যের পরিপূরক। পৌষের রোদমাখা কোনো একদিনে আপনিও চলে যেতে পারেন শহর ছেড়ে একটু দূরে। যেখানে গ্রামীন সড়কের পাশেই চোখে পড়বে হলুদ-সবুজের নয়নাভিরাম দৃশ্যপট। সরিষা ক্ষেতের কাছে গিয়ে দেখতে পাবেন ফুলে ফুলে মৌমাছি, প্রজাপতি ও ছোট ছোট পাখিদের ওড়াওড়ি। ফুলের গন্ধে, আবেশে চোখ বুজে মুহূর্তেই আপনি হারিয়ে যেতে পারবেন শৈশব-কৈশোরে মাঠে মাঠে দুরন্তপনার দিনগুলোতে। তবে প্রাকৃতির সৌন্দর্য্য উপভোগ করার পাশাপাশি একটুখানি খেলা তো করতেই হবে, যেন ফসলের ক্ষতি না হয়।
সরিষা ফুলের হলুদ সৌন্দর্য দেখার সময় শুরু! এ যেন প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের মিলন উৎসব। এই উৎসবে আপনিও সামিল হতে পারেন। ঘুরে আসতে পারেন হলুদ দুনিয়া থেকে। যারা শহরে থাকেন তাদের বলছি, মনকাড়া হলুদ সরিষা ক্ষেত দেখে আসুন এই শীতেই।
সরিষা ফুলের হলুদ গ্রাম
ফুসফুসের উপকার সাধিত হয় সরিষা ফুলের ঘ্রাণে। লক্ষ্মীপুরের সদরের চরশাহী, দালাল বাজার ইউনিয়নের মহাদেবপুর, চররুহিতা ইউনিয়ন, রায়পুর উপজেলা ও কমলনগরের আন্ডার চর এলাকা, রামগতির চরআলগী কলাকোপাসহ চরচরাঞ্চলের যেকোনো এক সরিষা ক্ষেতে হলুদে মিশে যান একদিন। শীতে সেখানকার কৃষকরা ব্যস্ত থাকে সরিষার পরিচর্যায়, ভ্রমর মধু খুঁজে ফিরছে ফুলে ফুলে। দেখবেন নানা রঙের প্রজাপতিতে ভরে আছে সরিষা ক্ষেত। রঙ-বেরঙের প্রজাপতি ডানা ঝাপটানো চিত্তে জাগাবে নবতর আনন্দ।
কুয়াশায় মোড়ানো প্রকৃতি। চারিদিকে বিরাজ করছে শীতের আবহ। মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে হলুদের বিশাল সমারোহ। কুয়াশা ও ঝলমলে রোদের খেলা এখন দিগন্ত বিস্তৃত হলদে বরণ সরিষার ফুলে ফুলে। দিগন্তজোড়া হলদে রঙের সেই সরিষা ফুলের সৌন্দর্য দেখতে যেতে পারেন মেঘনা নদী বেষ্টিত লক্ষ্মীপুরের চরাঞ্চলের বিস্তৃর্ণ সরিষা ক্ষেতে। চাইলে আপনার প্রিয় মানুষটিকেও এই ভ্রমণের সফরসঙ্গী করতে পারেন। আর সরিষা ফুলের সঙ্গে বোনাস হিসেবে থাকছে শীতের সকালে খেজুরের রস খাওয়া, মেঘনা নদীতে ঝাপঝাঁপি, স্থানীয় খাবারের স্বাদ নেয়া ও বিরামহীন ছবি তোলা।
লক্ষ্মীপুর উত্তর স্টেশন কিবা কোট চত্বর ঝুমুর এলাকা থেকে থেকে বাসে প্রায় ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই কমলনগর বা রামগতি, রায়পুরের সরিষা ফোটা চরচরাঞ্চলে পৌঁছানো সম্ভব। তোরাবগঞ্জ নেমে প্রথমেই খেজুরের রস দিয়ে যাত্রা শুরু করতে পারেন। এরপর অটোতে করে হলুদ ফুলের রাজ্যে প্রবেশ করুন। দুপুরটা কাটিয়ে দিন হলুদের রাজ্যেই। দুপুরের খাবার খেয়ে যেতে পারেন মেঘনা পাড়ে।
কাছে কিংবা দূরে, যে দিকেই বেড়াতে যান না কেন সরিষার রাজ্যে ভ্রমণে যেতে নিজস্ব কিংবা ভাড়া করা কোনো গাড়ি নেয়া উচিত। খরচ কমাতে কয়েকজন মিলে একটি গাড়ি ভাড়া করে নিন। তাহলে ইচ্ছেমতো ভালোলাগা যে কোনো জায়গাতেই থেমে যেতে পারবেন। ঘুরতে গিয়ে সরিষা ক্ষেতের যেন কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকে অবশ্যই নজর রাখবেন। মনে রাখবেন, সরিষা ক্ষেতে ভ্রমণের সবচেয়ে ভালো সময় খুব সকাল কিংবা বিকেল।