রাজধানীর কলাবাগান এলাকায় স্কুল ছাত্রী ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় দেশব্যাপী চলছে উত্তেজনা। ধর্ষণ মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড আইন প্রণয়নের পরেও দেশে ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি, নারী নির্যাতন কমেছে বলে মনে হয় না। প্রতিদিনকার এমন কোন খবরের কাগজ বাদ পড়ে না, নারী নির্যাতন ধর্ষণ ও হত্যার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনার খবর ছাপা হয় না। নতুন করে খবরের কাগজের মধ্যে আরেকটা খবর উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে যে, নারীর হাতে পুরুষ নির্যাতন হচ্ছে। এ নিয়ে আইন প্রণয়নের জন্য দেশব্যাপী বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করেছে।
ধর্ষণ কত প্রকার? মতের বাহিরে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করলে তাকে ধর্ষণ বলা হলেও কলাবাগানের বিষয়টিকে কি বলা হবে? দু’জনের মতে দৈহিক চাহিদা মেটানোর পর যদি কারো স্বার্থে আঘাত লাগে তখন কি সেটা ধর্ষণ হবে? তবে দুজনের মতে ঘটা শারীরিক সম্পর্ককে ‘একতরফা’ ধর্ষণ বলে আইন-আদালতের কঠিন যাঁতাকলে পড়তে হয়। কিন্তু কেন? যদি শারীরিক সম্পর্ক নারীর মতের বিরুদ্ধে হয় তবে রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা একশ ভাগ। আর দুজনার মতে হলে রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা তেমন একটা নেই, এক্ষেত্রে যদি মেয়েটি ভার্জিন হয় তবে যৎসামান্য রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ঢাকা কলাবাগানের বিষয়টি কিভাবে ব্যাখ্যা করব বুঝতে পারছি না। এখানে তাদের ঘটিত ঘটনা আর আগের দিনের ফেসবুক মেসেঞ্জারে চ্যাট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ‘ও লেভেলে’ পড়ুয়া মেয়েটির সাথে ধর্ষণ ও হত্যার সাথে জড়িত এক নং আসামী ফারদিন ইফতেখার দিহানের সাথে সম্পর্ক বেশি দিনের নয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়, দুজনার মেসেঞ্জার চ্যাটে দিহান ‘আগামীকাল তার মা-বাবা কেউ বাসায় থাকবে না’ বলে মেয়েটিকে বাসায় আসার আহ্বান জানায়। এতে মেয়েটি ‘ভয় করছে’ বলে কিছু নমনীয় ভাষায় চ্যাটের জবাব দেয়। তদুপরি দিহান স্পষ্ট করে বলে- ‘বাসায় কেউ থাকবেনা, শুধুমাত্র আমি থাকবো আর তুমি। ভয় কিসের? মেয়েটি আবারো বলছে -‘ভয় লাগছে’। ছেলেটি একটু আনাড়ি হয়ে বলছে ‘তাহলে তুমি আমায় ভালোবাসো না?’ মেয়েটি বলল -‘ভালোবাসি সোনা।’ এবার দিহান বললো- ‘আসবে বলো।’ মেয়েটি জবাব দিলো- ‘আচ্ছা, ওকে আসবো।’
ঘটনার দিন দিহানের বাসার সিসি ফুটেজ ও দারোয়ান দুলালের বক্তব্য থেকে জানা গেল মেয়েটিকে বাসার সামনে থেকে দিহান রিসিভ করে বাসার ভেতরে নিয়ে গেল। এর দেড় ঘণ্টার মাথায় দিহান ইন্টারকমে দারোয়ান দুলালকে উপরে যেতে বলে। উপরে গিয়ে দুলাল দেখে মেয়েটি রক্তাক্ত অবস্থায় সোফার উপর শোয়া। দিহান ধরে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। দিহান দুলালকে বলছে গাড়ি রেডি করার জন্য। পরে আনোয়ার খান মেডিকেল হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে। দিহান নিজেই মেয়েটির মাকে ফোন করে হাসপাতালে যেতে বলে।
মেয়েটি তো সব জেনেশুনে ফাঁকা বাড়ীতে গেলো। একটা তরুণী একটা তরুণের ডাকে সাড়া দিয়ে একলা বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্য কি হতে পারে! নিশ্চয়ই দুজনার অভিসন্ধি ভালো ছিল না। এক্ষেত্রে মেয়েটিকে দোষারোপ করতে পারি। মেয়েটিকে তো দিহান স্পষ্ট করেই বলেছে যে তাদের ‘বাসায় কেউ থাকবেনা, একলা শুধু দুজনে সময় কাটাবে।’ মেয়েটি কি অবুঝ ছিলো? শিশু ছিলো? বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ছিলো? তার কি ভালো-মন্দ বোঝার ক্ষমতা ছিলো না? তার একলা বাসায় আগমনের অর্থ কি!
আচ্ছা, ধরেই নিলাম মেয়েটি ভালোবাসার মানুষের আহবানে সাড়া দিতে দিহানের বাসায় গেলো। তো শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে সম্মত হলো কেন? যদি সম্মত না হতো তাহলে দস্তাদস্তি করে তো সে চলে আসতে পারতো। সে জোর করে চলে এলো না কেন? এতে আমরা কী বুঝে নিতে পারি!
মেয়েটি অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মরে যাওয়ার পরে আজ দেশে-বিদেশে হইচই পড়ে গেলো। এরকম তো প্রতিদিন প্রতিরাত হাজার হাজার মেয়ে পুরুষ দ্বারা আক্রান্ত হয়ে চৌকাঠ ভাঙে। তবে ‘আক্রান্ত’ শব্দটা যা বললাম তা কিন্তু একশ ভাগ ঠিক না। নারী-পুরুষ উভয়ের সম্মতিতে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি হয়।
সম্প্রতি পর্নো সাইট গুলো দেখে পুরুষের চেয়ে নারীরাই এগিয়ে আছে বিভিন্ন কলাকৌশলে মেতে উঠতে। নারীরাই দেহভোগের উন্মুক্ত খেলায় পশুরূপে আবির্ভূত হয়। তারা এতটাই নিচ হতে পারে যা পর্নো তারকাদের হার মানায়। বাংলাদেশের বাঙালি মেয়ে এক কণ্ঠশিল্পী ও অভিনেত্রী কিভাবে তাদের পুরুষ বন্ধুর সাথে যৌন লীলায় মেতে উঠেছে তা সত্যিই ভাবিয়েছিল তৎসময় দেশের সচেতন মহলকে। ঘৃনা, ধিক্কার, থুতু ছিটানো ছাড়া কিছুই করার ছিলনা।
অন্যদিকে আরেকটা বিষয় হতে পারে মেয়েটি যখন দিহানের বাসায় যাওয়ার জন্য তার বাসা থেকে বের হলো তখন মেয়েটির মা কোথায় ছিলো? সে কি ভূমিকা পালন করেছে? নাকি তার কাছে বলেই মেয়েটি চৌকাঠ ভাঙ্গার জন্য ঘর থেকে বেরিয়েছে! আমরা কার দোষ দিবো! যেহেতু ধর্ষণে মেয়েটি অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা গেছে তাহলে তো এর আইনের উপযুক্ততা দেখাতেই হবে।
লেখক: অ আ আবির আকাশ, কলামিস্ট, কবি সাংবাদিক।