ঢাকা ০৪:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সমাজ পরিবর্তনে সাংবাদিকদের ভূমিকা অপরিসীম। স্কানথর্পের নব নির্বাচিত এমপির সাথে নর্থ বাংলা প্রেসক্লাবের মতবিনিময়। স্কানথর্পের নব নির্বাচিত এমপির সাথে নর্থ বাংলা প্রেসক্লাবের মতবিনিময়। ম্যানচেস্টার সহকারী হাইকমিশনার এর সাথে নর্থ বাংলা প্রেসক্লাবের সৌজন্যে সাক্ষাৎ যুক্তরাজ্যের নর্থ-বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ফখরুল হোসাইনের সাথে বিশ্বনাথ মডেল প্রেসক্লাবের মতবিনিময় নর্থ বাংলা প্রেসক্লাব নর্থ বাংলা প্রেসক্লাব ইউকের আত্মপ্রকাশ, সভাপতি ফখরুল হোসাইন সম্পাদক নুরুল আমিন ৪০ কেজি ওজনের হলি রামাদ্বান ফ্যামেলি ফুড প্যাক বিতরণ করল আননিয়ামাহ উইমেন্স এডুকেশন ট্রাস্ট ইউ কে যুক্তরাজ্যের উইলশ্যায়ার কাউন্টির ডেপুটি লেফট্যানান্ট হলেন বিশ্বনাথের মাকরাম আলী আফরুজ যুক্তরাজ্যের উইলশ্যায়ার কাউন্টির ডেপুটি লেফট্যানান্ট হলেন বিশ্বনাথের মাকরাম আলী আফরুজ

অন্যরকম এক ডিসেম্বর!

লেখকঃ অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)

বারো মাসে ছয় ঋতু আর তেরো পার্বণের বাংলাদেশে ডিসেম্বর বরাবরই আলাদা। বিজয়ের মাস বলে কথা। ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টিয়ে নবেম্বর ডিসেম্বরে হওয়া মানেই বিজয়ের আরেকটি উদযাপন। বলাই বাহুল্য ডিসেম্বর তাই আমাদের কাছে অন্য গুরুত্ব বহন করে। তার মধ্যে এবারের ডিসেম্বর আরেকটু অন্যরকম। এবারের ডিসেম্বরে আমাদের ৪৯তম বর্ষপূর্তি। ’২৫, ’৫০ বা ’৭৫-এর

যেমন আলাদা একটা ভার আছে, ’৪৯-এর যে তেমনটা নেই, এ কথা মানতেই হবে। তার পরও এবারের ডিসেম্বরটা অন্যরকম। এবারের ডিসেম্বরে দুটো বিশেষ ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। একটি স্পষ্টতই দৃশ্যমান। ছয় কিলোমিটারের চেয়েও বেশি দীর্ঘ একটি কাঠামো দৃশ্যমান না হয়ে পারে না। যেই পদ্মার নাকি ‘কূল নাই, কিনার নাই’, সেই পদ্মার দু-কূলকেই জুড়ে দিয়েছেন শেখ হাসিনার সরকার। ট্রেনে বা গাড়িতে না হলেও ভরা বর্ষায় অন্তত হেঁটে অতিক্রম করা যাবে পদ্মার বিশালত্ব। আর পদ্মার বুকে গাড়ি ছোটানোর স্বপ্নটাও পূরণ হয়ে যাবে আগামী বছরই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের যুগব্যাপী নিরবচ্ছিন্ন শাসনে বাংলাদেশের ভৌত আর ডিজিটাল অবকাঠামোর যে শনৈঃশনৈ উন্নতি, পদ্মা সেতু তারই প্রতীক। পাশাপাশি এক সময়ের প্রায় শতভাগ দান নির্ভর বাংলাদেশ এখন প্রায় শতভাগই স্বাবলম্বী। পদ্মা সেতুর ত্রিশ হাজার কোটি টাকার বিল রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে পরিশোধ করে বাংলাদেশ তার নতুন অর্থনৈতিক সক্ষমতার পরিচয় তুলে ধরেছে গোটা বিশ্বের সামনে। এই ডিসেম্বরেই যখন পদ্মা সেতুতে সংযোজিত হবে সর্বশেষ স্প্যানটি, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নতুন পথ চলার আনুষ্ঠানিক সূচনা হবে তা। কাজেই এবারের ডিসেম্বরের গুরুত্ব যে অন্যরকম, তা নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশই নেই।

পাশাপাশি ডিসেম্বরে আরেকটি ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। গত ক’দিন ধরেই আমরা এদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির বাড়াবাড়ি রকমের আস্ফালন দেখছি। বঙ্গবন্ধুকেও ছেড়ে কথা বলছে না তারা। এতই তাদের স্পর্ধা যে, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে প্রকাশ্যে তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যকে বুড়িগঙ্গায় ছুড়ে ফেলার ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছে। কেউ কেউ হয়ত ভাবছেন এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কারও কারও কাছে এটি নতুন গজানো পাখায় ভর দিয়ে পিপীলিকার উদ্দেশ্যহীন ওড়াউড়ি। আবার কেউ কেউ ভাবছেন এটি বোধহয় নিভে যাওয়ার আগে প্রদীপের হঠাৎ জ্বলে ওঠা। আমিও প্রথম প্রথম তাইই ভাবছিলাম। লিখেছিলামও তেমনটাই। এখন আর ভাবি না। ওদের অতটা হাল্কা করে দেখাটা আমার কাছে বোকামি। এটি যেমন অকাট্য সত্য যে, বাংলাদেশ হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, তেমনি এ কথাও কিভাবে ভুলি যে, এই ভূখণ্ডেই দু’শ’ বছরের বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পুষ্ট হয়েছে সাম্প্রদায়িক শক্তি আর সাম্প্রদায়িকতা।

পাকিস্তান, জিয়া, এরশাদ আর খালেদা জিয়া তো বটেই, এমনকি ব্রিটিশরাও এর ব্যতিক্রম ছিল না। ব্রিটিশ আমলের যে বঙ্গভঙ্গ, বাঙালীর বিকাশের জন্য তা কোন সৎ উদ্যোগ ছিল না। এর উদ্দেশ্য ছিল বাঙালীর মগজে ঢুকিয়ে দেয়া যে, আমরা আসলে ‘এক না, আমরা দুই।’ আমরা বাঙালী না, আমরা বাঙালী মুসলমান আর বাঙালী হিন্দু। আমরা একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতা করে নয়, বরং প্রতিযোগিতা করেই টিকে থাকব, প্রতিযোগিতা করেই বড় হব।

পাশাপাশি এদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তি পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে অনেক অপ্রত্যাশিত জায়গা থেকেও। এমনকি এদেশের একসময়কার অনুকরণীয় বাম রাজনীতিও একাত্তরের পরে পচে গিয়ে, গলে গিয়ে, প্রকারান্তরে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে শক্তিশালী করেছে। কমিউনিস্ট পার্টি যেমন জিয়াউর রহমানের খাল কাটার জন্য কোদাল হাতে কমরেড পাঠিয়েছে, তেমনি সিরাজ শিকদাররা যুদ্ধ করেছে বাংলাদেশকে আবার স্বাধীন করার জন্য। আর এমনকি শ্রদ্ধেয় মওলানা ভাসানীর আশ্রয়েও পুষ্ট হয়েছে অনেক নষ্ট প্রতিক্রিয়াশীল। এই অপশক্তি এদেশে ক্ষমতার কাছাকাছি ছিল বরাবরই, এমনকি একাত্তরের ন’টি মাসেও। একাত্তরের পরাজয়েও এরা হাল ছাড়েনি। ’৭৭-এ দুর্গাপূজার সময় চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রেক্ষাপট রচনা করা হয়েছিল। সেটা হতে পারেনি শুধু বঙ্গবন্ধুর বিচক্ষণতা আর তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপে।

বঙ্গবন্ধু আর শেখ হাসিনার গোটা বিশেক বছর বাদ দিলে, বাংলাদেশের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে শুধু থেকেছে এরাই। আওয়ামী লীগের যুগব্যাপী নিরবচ্ছিন্ন শাসনে এরা আজ ব্যাকফুটে, কিন্তু হাল ছাড়েনি। শক্তিও এদের ক্ষয় হয়েছে সামান্যই। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্ক, পতঙ্গের উদ্দেশ্যহীন ওড়াউড়ি নয়। নয় নিভু-নিভু প্রদীপের হঠাৎ জ্বলে ওঠাও। আগুন সন্ত্রাস কাজে আসেনি। কাজে আসেনি কোটা আর নিরাপদ সড়কের আন্দোলনের ছদ্মাবরণে দেশটাকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টাও। তাই ভাস্কর্যকে উপলক্ষ করে তারা এবার তাদের শেষ ছোবলটা দিতে চায়। মূর্তি আর ভাস্কর্যের বিভ্রান্তিতে আমাদের জড়িয়ে ফেলে। মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে আর করোনাকালের অস্থিরতাকে কাজে লাগিয়ে তারা আবারও ফিরে যেতে চায় ক্ষমতার কেন্দ্রের কাছাকাছি।

এবারের ডিসেম্বরটা তাই অন্যরকম। এই ডিসেম্বরের প্রথম দিনটাতেই ঢাকার রাজপথে নামবে স্বাধীনতাকামী, অসাম্প্রদায়িক হাজারো জনতার ঢল। ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক সংক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’ নামে গঠিত হয়েছে ৬০টি সমমনা প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক, একাত্তরের চেতনায় বিশ্বাসী সংগঠনের একটা প্ল্যাটফর্ম। এর মধ্যে আছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সম্প্রীতি বাংলাদেশ, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, প্রজন্ম ’৭১, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের মতো প্রগতিশীল সংগঠনগুলো। এই জোটের উদ্যোগে যে মানববন্ধন সেখান থেকেই সূচনা হবে এই অপশক্তির বিরুদ্ধে চূড়ান্ত লড়াই। এই ডিসেম্বরেই কলঙ্কমুক্ত হবে বাংলাদেশ। শুদ্ধ হবে বাংলার মাটি আর বাংলার জল। বঙ্গবন্ধুকে হৃদয়ে ধারণ করে ঘুরে দাঁড়ানো বাংলাদেশের নতুন চলার সূচনা হবে এই ডিসেম্বরেই। এই ডিসেম্বর তাই একেবারেই অন্যরকম।

লেখকঃ অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)
-চেয়ারম্যান, লিভার বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
-সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

সমাজ পরিবর্তনে সাংবাদিকদের ভূমিকা অপরিসীম।

অন্যরকম এক ডিসেম্বর!

আপডেট সময় ০৭:২০:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ ডিসেম্বর ২০২০

লেখকঃ অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)

বারো মাসে ছয় ঋতু আর তেরো পার্বণের বাংলাদেশে ডিসেম্বর বরাবরই আলাদা। বিজয়ের মাস বলে কথা। ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টিয়ে নবেম্বর ডিসেম্বরে হওয়া মানেই বিজয়ের আরেকটি উদযাপন। বলাই বাহুল্য ডিসেম্বর তাই আমাদের কাছে অন্য গুরুত্ব বহন করে। তার মধ্যে এবারের ডিসেম্বর আরেকটু অন্যরকম। এবারের ডিসেম্বরে আমাদের ৪৯তম বর্ষপূর্তি। ’২৫, ’৫০ বা ’৭৫-এর

যেমন আলাদা একটা ভার আছে, ’৪৯-এর যে তেমনটা নেই, এ কথা মানতেই হবে। তার পরও এবারের ডিসেম্বরটা অন্যরকম। এবারের ডিসেম্বরে দুটো বিশেষ ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। একটি স্পষ্টতই দৃশ্যমান। ছয় কিলোমিটারের চেয়েও বেশি দীর্ঘ একটি কাঠামো দৃশ্যমান না হয়ে পারে না। যেই পদ্মার নাকি ‘কূল নাই, কিনার নাই’, সেই পদ্মার দু-কূলকেই জুড়ে দিয়েছেন শেখ হাসিনার সরকার। ট্রেনে বা গাড়িতে না হলেও ভরা বর্ষায় অন্তত হেঁটে অতিক্রম করা যাবে পদ্মার বিশালত্ব। আর পদ্মার বুকে গাড়ি ছোটানোর স্বপ্নটাও পূরণ হয়ে যাবে আগামী বছরই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের যুগব্যাপী নিরবচ্ছিন্ন শাসনে বাংলাদেশের ভৌত আর ডিজিটাল অবকাঠামোর যে শনৈঃশনৈ উন্নতি, পদ্মা সেতু তারই প্রতীক। পাশাপাশি এক সময়ের প্রায় শতভাগ দান নির্ভর বাংলাদেশ এখন প্রায় শতভাগই স্বাবলম্বী। পদ্মা সেতুর ত্রিশ হাজার কোটি টাকার বিল রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে পরিশোধ করে বাংলাদেশ তার নতুন অর্থনৈতিক সক্ষমতার পরিচয় তুলে ধরেছে গোটা বিশ্বের সামনে। এই ডিসেম্বরেই যখন পদ্মা সেতুতে সংযোজিত হবে সর্বশেষ স্প্যানটি, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নতুন পথ চলার আনুষ্ঠানিক সূচনা হবে তা। কাজেই এবারের ডিসেম্বরের গুরুত্ব যে অন্যরকম, তা নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশই নেই।

পাশাপাশি ডিসেম্বরে আরেকটি ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। গত ক’দিন ধরেই আমরা এদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির বাড়াবাড়ি রকমের আস্ফালন দেখছি। বঙ্গবন্ধুকেও ছেড়ে কথা বলছে না তারা। এতই তাদের স্পর্ধা যে, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে প্রকাশ্যে তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যকে বুড়িগঙ্গায় ছুড়ে ফেলার ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছে। কেউ কেউ হয়ত ভাবছেন এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কারও কারও কাছে এটি নতুন গজানো পাখায় ভর দিয়ে পিপীলিকার উদ্দেশ্যহীন ওড়াউড়ি। আবার কেউ কেউ ভাবছেন এটি বোধহয় নিভে যাওয়ার আগে প্রদীপের হঠাৎ জ্বলে ওঠা। আমিও প্রথম প্রথম তাইই ভাবছিলাম। লিখেছিলামও তেমনটাই। এখন আর ভাবি না। ওদের অতটা হাল্কা করে দেখাটা আমার কাছে বোকামি। এটি যেমন অকাট্য সত্য যে, বাংলাদেশ হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, তেমনি এ কথাও কিভাবে ভুলি যে, এই ভূখণ্ডেই দু’শ’ বছরের বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পুষ্ট হয়েছে সাম্প্রদায়িক শক্তি আর সাম্প্রদায়িকতা।

পাকিস্তান, জিয়া, এরশাদ আর খালেদা জিয়া তো বটেই, এমনকি ব্রিটিশরাও এর ব্যতিক্রম ছিল না। ব্রিটিশ আমলের যে বঙ্গভঙ্গ, বাঙালীর বিকাশের জন্য তা কোন সৎ উদ্যোগ ছিল না। এর উদ্দেশ্য ছিল বাঙালীর মগজে ঢুকিয়ে দেয়া যে, আমরা আসলে ‘এক না, আমরা দুই।’ আমরা বাঙালী না, আমরা বাঙালী মুসলমান আর বাঙালী হিন্দু। আমরা একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতা করে নয়, বরং প্রতিযোগিতা করেই টিকে থাকব, প্রতিযোগিতা করেই বড় হব।

পাশাপাশি এদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তি পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে অনেক অপ্রত্যাশিত জায়গা থেকেও। এমনকি এদেশের একসময়কার অনুকরণীয় বাম রাজনীতিও একাত্তরের পরে পচে গিয়ে, গলে গিয়ে, প্রকারান্তরে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে শক্তিশালী করেছে। কমিউনিস্ট পার্টি যেমন জিয়াউর রহমানের খাল কাটার জন্য কোদাল হাতে কমরেড পাঠিয়েছে, তেমনি সিরাজ শিকদাররা যুদ্ধ করেছে বাংলাদেশকে আবার স্বাধীন করার জন্য। আর এমনকি শ্রদ্ধেয় মওলানা ভাসানীর আশ্রয়েও পুষ্ট হয়েছে অনেক নষ্ট প্রতিক্রিয়াশীল। এই অপশক্তি এদেশে ক্ষমতার কাছাকাছি ছিল বরাবরই, এমনকি একাত্তরের ন’টি মাসেও। একাত্তরের পরাজয়েও এরা হাল ছাড়েনি। ’৭৭-এ দুর্গাপূজার সময় চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রেক্ষাপট রচনা করা হয়েছিল। সেটা হতে পারেনি শুধু বঙ্গবন্ধুর বিচক্ষণতা আর তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপে।

বঙ্গবন্ধু আর শেখ হাসিনার গোটা বিশেক বছর বাদ দিলে, বাংলাদেশের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে শুধু থেকেছে এরাই। আওয়ামী লীগের যুগব্যাপী নিরবচ্ছিন্ন শাসনে এরা আজ ব্যাকফুটে, কিন্তু হাল ছাড়েনি। শক্তিও এদের ক্ষয় হয়েছে সামান্যই। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্ক, পতঙ্গের উদ্দেশ্যহীন ওড়াউড়ি নয়। নয় নিভু-নিভু প্রদীপের হঠাৎ জ্বলে ওঠাও। আগুন সন্ত্রাস কাজে আসেনি। কাজে আসেনি কোটা আর নিরাপদ সড়কের আন্দোলনের ছদ্মাবরণে দেশটাকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টাও। তাই ভাস্কর্যকে উপলক্ষ করে তারা এবার তাদের শেষ ছোবলটা দিতে চায়। মূর্তি আর ভাস্কর্যের বিভ্রান্তিতে আমাদের জড়িয়ে ফেলে। মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে আর করোনাকালের অস্থিরতাকে কাজে লাগিয়ে তারা আবারও ফিরে যেতে চায় ক্ষমতার কেন্দ্রের কাছাকাছি।

এবারের ডিসেম্বরটা তাই অন্যরকম। এই ডিসেম্বরের প্রথম দিনটাতেই ঢাকার রাজপথে নামবে স্বাধীনতাকামী, অসাম্প্রদায়িক হাজারো জনতার ঢল। ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক সংক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’ নামে গঠিত হয়েছে ৬০টি সমমনা প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক, একাত্তরের চেতনায় বিশ্বাসী সংগঠনের একটা প্ল্যাটফর্ম। এর মধ্যে আছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সম্প্রীতি বাংলাদেশ, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, প্রজন্ম ’৭১, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের মতো প্রগতিশীল সংগঠনগুলো। এই জোটের উদ্যোগে যে মানববন্ধন সেখান থেকেই সূচনা হবে এই অপশক্তির বিরুদ্ধে চূড়ান্ত লড়াই। এই ডিসেম্বরেই কলঙ্কমুক্ত হবে বাংলাদেশ। শুদ্ধ হবে বাংলার মাটি আর বাংলার জল। বঙ্গবন্ধুকে হৃদয়ে ধারণ করে ঘুরে দাঁড়ানো বাংলাদেশের নতুন চলার সূচনা হবে এই ডিসেম্বরেই। এই ডিসেম্বর তাই একেবারেই অন্যরকম।

লেখকঃ অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)
-চেয়ারম্যান, লিভার বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
-সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ