অ আ আবীর আকাশঃ জলযান নৌকা, পানসী, ডিঙ্গি, ট্রলারসহ মাছ ধরার ছোট নৌকা তৈরি করে যারা জীবন নির্বাহ করেন তাদের জীবন নৌকার মতই বিচিত্র। ঘাটে ঘাটে এজেলা ওজেলা করে জীবন চালিয়ে নেন এসব নৌকা তৈরিকারক বা নৌকা মিস্ত্রিরা।
লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার ক্যাম্পেরহাট এর নৌকা মিস্ত্রির সাথে কথা বলছিলাম। সংবাদ সারাক্ষণ পত্রিকার প্রকাশক আসাদুজ্জামান মাসুদ ভাইর নিমন্ত্রণে চরবংশীতে উনার শ্বশুরবাড়ি গেলে ওই এলাকায় নৌকা তৈরিকালে নৌকা মিস্ত্রি সুবল দাসের সাথে কথা হয়। জানতে চাইলাম মাছ ধরার বড় নৌকা বানাতে কত খরচ পড়ে? সুবল আমাদের অবাক করে দিয়ে বললেন- আড়াই লাখ টাকা থেকে ত্রিশলাখ টাকা পর্যন্ত খরচ পড়ে।ছোট নৌকা তৈরি করতে ৩৫ হাজার টাকা থেকে ১লাখ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। জলযান পানিতে হয়তো বেশি দিন টিকে না এই ভেবে খরচের অ্যামাউন্ট আমাদের কাছে বেশি মনে হলো।
:একটা নৌকা কত বছর ধরে পানিতে ভাসতে পারে?
: ভালো কাঠ হলে ত্রিশ পঁয়ত্রিশ বছর আর বাংলা কাঠ দিয়ে নৌকা তৈরি করলে বারো-তেরো বছর পানিতে ভাসে।
: ভালো কাঠ কি কি?
: ভালো কাঠ শাল, কেওড়া, গর্জন,সেগুন আর বাংলা কাঠ মেহগনি, কর্নাল, সোনালী, রনা।
: একটা নৌকা বানাতে কত দিন সময় লাগে?
: বাইশ তেইশদিন সময় লাগে।
: কতজন শ্রমিক এতে কাজ করে?
: তিন চার জন শ্রমিক কাজ করতে হয়।
নৌকা ছোট-বড় আছে এতে শ্রমিক কমবেশ নিতে হয় বলেও জানালেন সুবল। এবছর মহামারী করোনার কারণে আমরা নৌকা তৈরির তেমন কাজ পাইনি। একেকজন শ্রমিকের ঘরে চার পাঁচজন করে সদস্য আছেন। নৌকা বানিয়ে যাদের সংসার চলে জীবন-জীবিকার তাগিদে এঘাট ছেড়ে ওঘাটে যায় তারা ভীষণ কষ্টে দিন অতিবাহিত করছে। তাদের দিকে নজর নেই কারো।
এ নিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানের সাথে কথা বললে তিনি জানান -‘তারা তো আমার ইউনিয়নের বাসিন্দা না। কাজ করতে এসেছে, কাজ শেষে চলে যাবে।’
সুবল দাসেরা তাহলে কোন দেশের বাসিন্দা? জীবন-জীবিকার তাগিদে ঘুরে বেড়ান তারা।তাদের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন করলে সুবল দাস নিজেই বলেন -‘এখানে ওখানে করে জীবন চলে। ভোটার হতে পারেনি। জন্মস্থান শরীয়তপুরে ছিল, এখন নদী ভেঙ্গে গেছে বাপ-দাদার ভিটা। কাজ করতে এসে ক্যাম্পেরহাটে আশ্রয় নিয়েছি।
তবুও কি মানুষগুলোর দিকে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন নেই?