দিনের পর দিন ধরে বন্ধ বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। গত ১৮ মার্চ ২০২০ করোনা মহামারির কারণে বন্ধ ঘোষনা করা হয় দেশের সকল অফিস-আদালত, গণপরিবহন,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বৈদেশিক যোগাযোগ । এর পর ধীরে ধীরে সবকিছু চালু হলেও বন্ধ রয়েছে শুধুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো। উল্টো ধাপে ধাপে বাড়ানো হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি । কবে নাগাদ এগুলো খুলে দেয়া হবে এ বিষয়ে কিছুই বলছে না শিক্ষা মন্ত্রনালয় ।
ব্যপক জন সমাগম ও গণ জমায়েতের মতো স্থান যেমন, হাট – বাজার , শপিংমল , গণপরিবহন ইত্যাদি খুলে দেয়া হলেও কোন এক অদৃশ্য কারণে বন্ধ করে রাখা হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো । অজুহাত হিসেবে দেখানো হচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টি । কিন্তু শুধুমাত্র একটি কারণে এভাবে দিনের পর দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে রাখা যৌক্তিক কোন কারণ হতে পারে না । কারণ, করোনা মহামারী দ্রুত সমাধান হওয়ার মত কোন বিষয় নয় । কবে মহামারি নিয়ন্ত্রনে আসবে তার কি কোন নিশ্চয়তা আছে ? তাই ‘মহামারি কমে যাওয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে’- এমন ভেবে সবকিছু বন্ধ করে বসে থাকার কোন অবকাশ নেই ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য স্বংস্থার মতে , করোনা থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই । দশকের পর দশক স্থায়ী হতে পারে এটি। তাই করোনা মহামারীর অজুহাতে অনির্দিষ্ট কালের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে রাখা সুবিবেচনা প্রসুত নয় । তাছাড়া ভ্যাকসিন আসলেও তা বাংলাদেশে কবে আসবে এবং ভ্যাকসিন কতটুকু কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে ।
এদিকে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় মুখ থুবড়ে পড়েছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা । নেমে এসেছে ভয়াবহ এক স্থবিরতা । শিক্ষর্থীদের মাঝে বাড়ছে হতাশা ও উৎকন্ঠা । অনিশ্চয়তার ঘূর্ণিজালে পাক খাচ্ছে অসংখ্য শিক্ষার্থীর জীবন । অজানা এক অনিশ্চয়তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তাদের ভবিষ্যত । দীর্ঘদিন একটানা ঘরে থেকে একগুয়েমি ও হতাশায় আক্রান্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা ।
সরকার অনলাইন ক্লাসের কথা বললেও , এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত নেই কোন সার্বজনীন নীতিমালা । নেই সরকারী কোন সহায়তা কিংবা প্রণোদনা । তাছাড়া সবগুলো প্রতিষ্ঠানে অনলাইন ক্লাস চালু হয়েছে কিনা , এ বিষয়েও সুনির্দিষ্ট কোন তৎপরতা নেই সরকারের । কেবল অনলাইন ক্লাসের ঘোষনা দিয়েই ক্ষান্ত সরকার । বেশকিছু বেসরকারী প্রতিষ্ঠান নিজেদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অনলাইন ক্লাস চালু করলেও তাদের কার্যক্রমে নেই কোন স্বচ্ছতা । তাছাড়া কোন ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেশন আপগ্ৰেড করা হবে বলেও গুন্জন শোনা যাচ্ছে । বিষয়টি উদ্বেগ জনক । তাই এ বিষয়ে সরকারী সুনির্দিষ্ট নীতিমালা একান্ত প্রয়োজন ।
অনুষ্ঠিত হয়নি এ বছরের এইচ এসসি পরীক্ষা । লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর জীবন পড়েছে অনিশ্চয়তার মুখে । সরকারকে এ বিষয়ে যথেষ্ঠ তৎপর বলে মনে হয় না । কারণ তাদের কাছে সবকিছুর গুরুত্ব আছে , কিন্তু শিক্ষার কোন গুরুত্ব নেই । লকডাউন খুলে দেয়া হয়েছে সেই কবে । অথচ এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে চলছে গড়িমসি । সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা , প্রতিটি পরীক্ষার মাঝে পর্যাপ্ত গ্যাপ রেখে, স্বাস্থ্য বিধি বজায় রেখে , ধাপে ধাপে পরীক্ষাগুলো নিয়ে নেয়া যেতো । তবে এ জন্য প্রয়োজন সদিচ্ছা ও প্রচেষ্টা । তবে সরকারের ভেতর আপাতত এটি নিয়ে কোন চিন্তাই পরিলক্ষিত হচ্ছে নানা । আমাদের ‘শিক্ষামন্ত্রী ‘, উনি তো মহাজ্ঞানী ! শিক্ষা ব্যবস্থাকেই আগাগোড়া ঢেলে সাজাতে গিয়ে আপাতত সব ডাল- খিচুড়ি বানিয়ে ফেলেছেন । কিন্তু করোনা মহামারীর সময় শিক্ষা মন্ত্রনালয় চালাতে গিয়ে চরম অব্যবস্থাপনার পরিচয় দিয়েছেন তিনি ।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে যদি গণপরিবহন খুলে দেয়া যেতে পারে , তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে সমস্যা কোথায় ?? করোনা ভাইরাস কি শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই থাকে ? নাকি আপনাদের কাছে সবকিছুর গুরুত্ব আছে, শুধু শিক্ষার কোন গুরত্ব নেই ? শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি এমন অবহেলা একটি জাতির জন্য সত্যিই অবমাননাকর । সুতরাং , অবিলম্বে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া এখন সময়ের দাবী ।
মোঃ আরাফাত রহমান
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়