ডেস্ক নিউজঃ বাংলাদেশে আজ পালিত হচ্ছে মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা। বৈশ্বিক করোনা মহামারির মধ্যে ভিন্ন মাত্রা ও আবহে এ বছর আসছে এই ঈদ। করোনার প্রার্দুভাব ও সারা দেশে দফায় দফায় বন্যা ঈদ পালনের অনুষঙ্গগুলোর ছন্দপতন ঘটাচ্ছে। উৎসবের সেই রোশনাই, বর্ণচ্ছটা ম্রিয়মাণ হয়ে আছে।
আজ থেকে চার হাজার বছর আগে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য হজরত ইবরাহিম (আ.) তার ছেলে হজরত ইসমাইল (আ.)কে কোরবানি করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু আল্লাহর কৃপায় ও অপার কুদরতে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সেই ত্যাগের মহিমার কথা স্মরণ করে মুসলিম সম্প্রদায় জিলহজ মাসের ১০ তারিখে পশু কোরবানি করে থাকে। উদ্দেশ্য আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করা। এই ঈদের পর দুই দিন পর্যন্ত (১১ ও ১২ জিলহজ) পশু কোরবানি করার ধর্মীয় বিধান রয়েছে।
এদিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে ঈদুল ফিতরের মতো এবারও ঈদগাহ মাঠ বা উন্মুক্ত স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। এজন্য সারা দেশের মসজিদগুলোতেই দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাইকে ঈদের নামাজ পড়তে হবে। নামাজ শেষে কারও সঙ্গে কোলাকুলি বা করমর্দন করা যাবে না। এই করোনাকালে আনন্দ কিছুটা কম হলেও সারা দেশে বিরাজ করছে ঈদের আমেজ। কিন্তু এ আমেজ পুরোপুরি উধাও দেশের বন্যাকবলিত বিভিন্নএলাকায়। কয়েক লক্ষাধিক মানুষ।
এই ঈদযাত্রায় অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। মাস্ক পরছেন না, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছেন না। ফলে করোনা সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, দেশে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হিসাবে শনাক্ত হয়েছে দুই লাখ ৩৭ হাজার ৬৬১ জনে। এর মধ্যে মারা গেছে তিন হাজার ১১১ জন এবং সুস্থ হয়েছে এক লাখ ৩২ হাজার ৯৬০ জন। বাকিরা এখনো করোনা আক্রান্ত হিসেবেই আছে, যাদের মধ্যে হাসপাতালে আছে চার হাজারের বেশি মানুষ। অন্য আক্রান্তরা বাসায় অবস্থান করছে। আগের মতো আতঙ্ক না থাকলেও তাদের ঘরে ঈদ উদযাপনের আয়োজন না থাকাই স্বাভাবিক।
অন্যদিকে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের কাছে এবারের ঈদ আনন্দ আরো ফিকে হয়ে গেছে। নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে, কেউ বা আশ্রয় নিয়েছে বেড়িবাঁধের কাদাপানিতে। সেখানে তারা ঝুপড়ি বানিয়ে পার করছে দুর্যোগের সময়। আবার অনেকে বানের পানিতে হাবুডুবু খেয়েও নিজ নিজ ঘরে আটকে আছে। এসব মানুষের কাছে ঈদের আনন্দ বলতে কিছুই নেই। তারা এখন ত্রাণের অপেক্ষায় থাকে সব সময়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে এখন পর্যন্ত বন্যাকবলিত জেলাগুলো হচ্ছে ঢাকা, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জামালপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ। বন্যাকবলিত উপজেলার সংখ্যা ১৫০টি এবং ইউনিয়নের সংখ্যা ৯৩৬টি। পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা ১০ লাখ ৪০ হাজার ২৬৬টি এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৫০ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৩ জন। বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এক হাজার ৫৪৮টি। আশ্রয় নেওয়াদের সংখ্যা ৭৩ হাজার ১৭৩ জন। বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে ৮৯৩টি এবং বর্তমানে চালু আছে ৩৭২টি। মানুষের পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিত গবাদি পশুর সংখ্যা ৭৭ হাজার ৩০১টি।
দেশবাসীকে পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা এ উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।