ঢাকা ০৪:০৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সমাজ পরিবর্তনে সাংবাদিকদের ভূমিকা অপরিসীম। স্কানথর্পের নব নির্বাচিত এমপির সাথে নর্থ বাংলা প্রেসক্লাবের মতবিনিময়। স্কানথর্পের নব নির্বাচিত এমপির সাথে নর্থ বাংলা প্রেসক্লাবের মতবিনিময়। ম্যানচেস্টার সহকারী হাইকমিশনার এর সাথে নর্থ বাংলা প্রেসক্লাবের সৌজন্যে সাক্ষাৎ যুক্তরাজ্যের নর্থ-বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ফখরুল হোসাইনের সাথে বিশ্বনাথ মডেল প্রেসক্লাবের মতবিনিময় নর্থ বাংলা প্রেসক্লাব নর্থ বাংলা প্রেসক্লাব ইউকের আত্মপ্রকাশ, সভাপতি ফখরুল হোসাইন সম্পাদক নুরুল আমিন ৪০ কেজি ওজনের হলি রামাদ্বান ফ্যামেলি ফুড প্যাক বিতরণ করল আননিয়ামাহ উইমেন্স এডুকেশন ট্রাস্ট ইউ কে যুক্তরাজ্যের উইলশ্যায়ার কাউন্টির ডেপুটি লেফট্যানান্ট হলেন বিশ্বনাথের মাকরাম আলী আফরুজ যুক্তরাজ্যের উইলশ্যায়ার কাউন্টির ডেপুটি লেফট্যানান্ট হলেন বিশ্বনাথের মাকরাম আলী আফরুজ

বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার কি ধ্বংস হওয়ার পথে!

বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার কি ধ্বংস হওয়ার পথে?
বাংলাদেশের শ্রমবাজার বহির্বিশ্বে প্রশ্নবোধক হতে চলেছে। সরকার দলীয় লোকজনেই অন্ধকার ডেকে আনছে। শীঘ্রই সামনে আসছে এ বিপদ। কেউ কেউ এতোটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে দেশ জাতির কথা না ভেবে নিজের স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে বিদেশে শ্রমবাজারে ধ্বংস করে দিচ্ছেন। মানব পাচারকারী শহীদ ইসলাম পাপুল, করোনার ভূয়া রিপোর্ট প্রদানকারী শাহেদ করিম এরা কি বাংলাদেশকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি ভেবে যাচ্ছেতাই কান্ড ঘটাচ্ছে। এদের কী শাস্তি হবে? অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে? এদের কারণে বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। প্রয়োজন অনুসারে নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টি করাও সম্ভব হচ্ছে না। ফলে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি বাড়লেও কমছে জনশক্তি রপ্তানি। এ পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার বিষয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বাড়ছে। কেননা টালমাটাল বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিও মন্দার মধ্য দিয়ে সময় পার করছে। যার প্রভাব থেকে মুক্ত নয় বাংলাদেশও। আর অন্যদিকে লোভী শ্রেণির অসাধু ও প্রতারক লোকের কারণে বিশ্বে আমাদের মান সম্মান নষ্ট হচ্ছে। ভুয়া কোভিড-১৯ নেগেটিভ রিপোর্ট বিক্রি হয়েছে এবং সেই রিপোর্ট নিয়ে আবার কিছু প্রবাসী বিদেশে গিয়ে কোভিড পজিটিভ হয়েছেন, তাদেরকে বিদেশের বিমানবন্দরে অবতরণ করতে অনুমতি না দেওয়ায় আবার দেশে ফেরত আসতে হচ্ছে, এর চেয়ে লজ্জার আর কি আছে! ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে জানতে পারি বাংলাদেশের সঙ্গে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত সব ফ্লাইট বাতিল করেছে ইতালি। এ সংক্রান্ত নোটিশ জারি করেছে ইতালি সরকার। ইতালির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বাংলাদেশ থেকে ইতালিগামী সব ফ্লাইট ও যাত্রী নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এখন থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত যে কোনো দেশের নাগরিক কিংবা যে কোনো দেশ হয়ে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া কোনো ফ্লাইট ইতালিতে অবতরণের অনুমতি পাবে না।
এই নিয়ে প্রবাসী শ্রমিকদের স্বজনরা যেমন উদ্বিগ্ন তেমনি মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজার নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। এরইমধ্যে শ্রমিক পাঠানো বন্ধ করতে বলেছে ইরাক।
বাংলাদেশের অর্থনীতির বিরাট ক্ষতি হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে কারণ দেশে আটকে পড়া কয়েক হাজার বাংলাদেশি প্রবাসী যারা ইতালিতে যেতে পারছেন না, তাদের চাকরি চলে যেতে পারে।এতে অবশ্যই আমাদের রেমিটেন্সের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ইতালি কঠোর লকডাউনের মাধ্যমে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করছে। আর সেখানে বাংলাদেশ থেকে গত কয়েকদিনে যত ফ্লাইট গিয়েছে তার প্রায় সবগুলোতেই কেউ না কেউ কোভিড-১৯ পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। ওখানে পরীক্ষায় যাদের করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে তারা সবাই বাংলাদেশ থেকে ভুয়া রিপোর্ট নিয়েছেন। এতে শুধু ইতালিতে নতুন করে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকা রয়েছে তাই নয় বরং বাংলাদেশি প্রবাসীদের মান সম্মানে বড় ধাক্কা নেমে আসবে মনে হচ্ছে। এতে আমাদের দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।
করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব এক কঠিন সময় অতিক্রম করছে। কখন এটা নিয়ন্ত্রণে আসবে সে সম্পর্কে কেউই কোনো নির্দিষ্ট ধারণা দিতে পারেনি। তারপরও এই করোনাভাইরাস থেকে আমাদেরকে রক্ষা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী কি না করে যাচ্ছেন। নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, জনসমাজে সেসব উদ্যোগ খুবই প্রশংসিত। তিনি বিভিন্ন সেক্টরের উৎপাদনশীলতা টিকিয়ে রাখতে বিশাল অঙ্কের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণাসহ দরিদ্র মানুষ এবং মেধাবী শিক্ষার্থীদেরকে ত্রাণ সহযোগিতার পাশাপাশি অর্থনীতির চাকা সচল রাখা এবং জীবিকার জন্য নিয়েছেন বিভিন্ন পরিকল্পনা। করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় দ্রুত বিভিন্ন যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য দেশে এবং বিদেশে প্রশংসিত হচ্ছেন শেখ হাসিনা।
কিন্তু অসৎ লোভী প্রতারক মানুষগুলোর কারণে বড় ধরনের সংকট ও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে দেশের শ্রমবাজার। মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, কুয়েত, ইতালিসহ কয়েকটি দেশ থেকে প্রবাসী শ্রমিকরা দেশে ফেরত আসছে। এমতাবস্থায় বিদেশে শ্রমবাজার সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার বিষয়ে সরকারের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। আমরা মনে করি প্রবাসী শ্রমিকদের বিষয়ে সরকারের যথাযথ কর্মসূচি থাকা আবশ্যক; বিশেষ করে নতুন শ্রমবাজার তৈরিতে সরকারকে দৃষ্টি দিতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম দেশ সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার ও ইউএই (দুবাই-আবুধাবি) থেকে কমপক্ষে ১৫ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিককে ফেরত পাঠানোর শঙ্কা প্রকাশ করছেন দেশগুলোতে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাস, প্রবাসী বাংলাদেশি ও অভিবাসন বিশ্লেষকরা। অন্যদিকে কুয়েত সরকার দেশে অভিবাসীদের সংখ্যা কমিয়ে আনতে একটি প্রবাসী কোটা বিল প্রণয়ন করেছে।
করোনাভাইরাসের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে এই আশংকায় কোনো এয়ারলাইন্স বাংলাদেশ থেকে কোনো যাত্রী নিতে পারবে না। এমনকি কোনো ট্রানজিট ফ্লাইটেও যাত্রী নেওয়া যাবে না, যারা বাংলাদেশ থেকে যাবে। কারণ বাংলাদেশ থেকে গত সোমবার ইতালিতে যাওয়া একটি বিশেষ ফ্লাইটে ২১ জন করোনাভাইরাস পজিটিভ শনাক্ত হয়। পরবর্তীতে দেশটির প্রভাবশালী প্রায় সব পত্রিকার প্রধান শিরোনামে নেতিবাচকভাবে বাংলাদেশের খবর প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট নিয়ে এই প্রবাসীরা ইতালিতে গেছেন বলে শিরোনামে উল্লেখ করা হয়েছে। দৈনিক পত্রিকায় শিরোনাম হয়েছে এভাবে ‘বাংলাদেশ থেকে ভুয়া করোনার সার্টিফিকেট’। এছাড়াও ইতালির পত্রিকার সম্পাদকীয় কলামেও লেখা প্রকাশ পেয়েছে যে বাংলাদেশি প্রবাসীদের ওপর ঐ দেশের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ যেন ভালোভাবে নজর রাখে। সাধারণ নাগরিকের মনে প্রশ্ন জাগে কিভাবে সাহেদের মত মানুষদেরকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করোনাভাইরাস চিকিৎসার অনুমতি দিল! স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিয়ে জনসমাজে নানা ধরনের মন্তব্য রয়েছে এবং এদের কার্যক্রম মানুষের নিকট কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। মানুষ বলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে ঢেলে সাজানো দরকার। অনেক দেশের সরকার প্রধান সঠিক ও যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হওয়ায় এবং অযৌক্তিক মন্তব্য দেওয়ায় নাগরিকের নিকট সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছেন, সেখানে আমাদের প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ফোর্বস ম্যাগাজিনসহ আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নেওয়া পদক্ষেপ এবং নেতৃত্বের কারণে আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। দক্ষতার সঙ্গে যেকোনো ষড়যন্ত্র এবং সংকট মোকাবিলা করা তার জন্য নতুন কিছু নয়। তারপরও নতুন করোনাভাইরাস মোকাবিলায়ও তিনি নিয়েছেন দ্রুত পদক্ষেপ। সেজন্য ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামও তার প্রশংসা করেছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিশ্বকে এক হয়ে করোনাভাইরাস মোকাবিলা করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। মার্চ মাসে ভিডিও কনফারেন্সে কোভিড-১৯ যুদ্ধে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে সার্কভুক্ত দেশের সরকার প্রধানদের আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
শ্রমবাজার এবং প্রবাসী শ্রমিকদের নিয়ে যারা কথা বলেন, কাজ করেন, তারা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি খারাপ হলে আমাদের শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং শ্রমবাজার দুটোই হুমকির মুখে পড়বে। করোনাভাইরাস সংকটে জনগণের পাশে আছেন এবং থাকবেন বলে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দেন দেশের সকল নাগরিককে। করোনাভাইরাস সংকট কাটিয়ে উঠতে প্রতি মুহূর্তের করণীয় ঠিক করতে দিনরাত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তাতে সবাই তার কার্যক্রমে আশান্বিত। তিনি সার্বক্ষণিক এ বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখছেন এবং প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী জীবন ও জীবিকা এই দুটি বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছেন যা সাধারণ নাগরিকের নিকট গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। ইতালিতে লকডাউনের শুরুর দিকে যারা বাংলাদেশে আসছিলেন তারাই এখন ইতালিতে যাচ্ছেন। চাকরি এবং জীবিকার জন্য অনেক বেশি টাকা খরচ করে বিশেষ ফ্লাইটের টিকিটে তারা গিয়েছেন। কিন্তু কিছু ধান্দাবাজ প্রতারকের জন্য এখন প্রবাসী সবাইকেই বিপদে পড়তে হলো। এমনকি আমাদের দেশে থেকে যাওয়া কেউ কোয়ারেন্টিন ভঙ্গ করলেই তিন মাসের কারাদণ্ড শাস্তি পেতে হবে। যেখানে আমাদের প্রবাসীরা কর্মঠ হওয়ায় বাংলাদেশের সুনাম ছিল, এখন ইতালির নাগরিকরা আমাদের সুনজরে দেখছে না। চীনের নাগরিকরাও ইতালিতে গত মার্চ মাসে বৈষম্যের শিকার হয়েছিল চীনের উহান থেকে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছে বলে। এখন আমাদের অনেক নাগরিকের সাথে সেরকমটা ঘটতে যাচ্ছে। করোনাভাইরাস টেস্ট করে বিভিন্ন সংস্থা ভুয়া রিপোর্ট দিল এবং সেই ভুয়া রিপোর্ট নিয়ে প্রবাসীরা যেভাবে বিদেশের বিমানবন্দরে ধরা পড়লেন, এতে করে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক ভাবে এবং বিদেশের মাটিতে আমাদের ভাবমূর্তি চরমভাবে নষ্ট হয়েছে যার প্রভাব খুব শীঘ্রই শেষ হবে না মনে হচ্ছে। যখন বিদেশের মাটিতে আমাদের পাসপোর্ট, লাগেজ, সার্টিফিকেট, ল্যাপটপ আমাদের টাই-স্যুট নানাভাবে চুলচেরা খোঁজাখুঁজি করবে তখন আমাদের লজ্জার সীমা থাকবে না! এর মানে জ্ঞান-বিজ্ঞান, চিন্তা চেতনা, আমাদের সংস্কৃতিসহ হাজারো জায়গায় কালিমার দাগ লেগে গেল কি? দেশের অর্থনীতির মূল সূচকগুলোতেও দেখা দিয়েছে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি। এতদিন রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি ও রপ্তানি আয় ইতিবাচক থাকলেও এখন তা ধরে রাখা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টিতে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকঢোল পেটালেও কার্যকর তেমন কোনো ফল পাওয়া যায়নি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষ কর্মী গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণকে গুরুত্ব দিয়ে আসছে সরকার ও বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো। এজন্য গাজীপুরে আন্তর্জাতিক মানের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করতে যাচ্ছে বায়রা। আগামী পাঁচ বছরে সাড়ে ৩ লাখ বিদেশি দক্ষ কর্মী নেবে জাপান। যা বাংলাদেশের জন্য একটা বড় সুযোগ বলে মনে করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি ইউরোপের​ দেশগুলোতেও দক্ষ কর্মী পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। জনশক্তি, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, মাত্র এক বছরের ব্যবধানে ৩৪ হাজার কর্মী কম গেছেন বিদেশে। অর্থাৎ ২০১৮ সালে ৭ লাখ ৩৪ হাজার ১৮১ জন কর্মী বিদেশে গেলেও ২০১৯ সালে গেছেন ৭ লাখ ১৫৯ জন কর্মী। সে হিসাবে ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে ৩৪ হাজার ২২ জন কম কর্মী বিদেশে গেছেন। শুধু তাই নয়, প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী ফেরতও আসছেন বিদেশ থেকে। বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ৬৫ হাজার ৩৭২ জন কর্মী ফেরত এসেছেন। আর ২০১৮ সালে ফেরত এসেছেন ৬৮ হাজার ৩৮২ জন কর্মী। শুধু মালয়েশিয়া থেকেই ফেরত এসেছেন ৫০ হাজার কর্মী। এর প্রধান কারণ দেখানো হয়েছে, ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া এবং চাকরি হারানো। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট দেশগুলো নানা কারণে কর্মীদের ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি না করায় বাধ্য হয়ে তাদের ফেরত আসতে হচ্ছে। ২০১৪ থেকে ২০১৯ গত ছয় বছরে সবচেয়ে বেশি কর্মী বিদেশে গেছেন ২০১৭ সালে। সে বছর বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গেছেন ১০ লাখ ৮ হাজার ৫২৫ জন কর্মী। আর সবচেয়ে কম গেছেন ২০১৪ সালে, ৪ লাখ ২৫ হাজার ৬৮৪ জন। অবশ্য সে বছর ফেরতও এসেছেন কম ৪৭ হাজার ২৬১ জন। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. শামছুল আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিশ্ববাজারে এখন দক্ষ কর্মীর চাহিদা বেশি। ফলে আমরা চেষ্টা করছি প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মীদের দক্ষ করে বিদেশে পাঠানোর। পাশাপাশি মালয়েশিয়া, কুয়েত, সৌদি আরব কিংবা দুবাই অর্থাৎ শুধু মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক নয়, বিশ্বের অন্যসব দেশেও কীভাবে দক্ষ কর্মী পাঠানো যায় সে চেষ্টাই আমরা করছি। এজন্য আমরা নতুন নতুন শ্রমবাজার খুঁজছি। যেমন জাপানেও আমরা দক্ষ কর্মী পাঠানো শুরু করেছি এবং দক্ষ কর্মীর একটা প্রভাব কিন্তু পড়তে শুরু করেছে। এজন্য শ্রমিক কম গেলেও রেমিট্যান্স কিন্তু বাড়ছে। সবমিলিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি সামনের দিনগুলোতে আশাব্যঞ্জক হবে বলে তিনি মনে করেন। এদিকে জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে বড় তিনটি শ্রমবাজারের মধ্যে দুটি দীর্ঘদিন যাবৎ প্রায় বন্ধ হয়ে আছে। এর মধ্যে ১৬ মাস ধরে বন্ধ মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। আর সাত বছর ধরে কর্মী পাঠানোয় গতি নেই সংযুক্ত আরব আমিরাতে। নতুন করে বড় কোনো শ্রমবাজারেও ঢুকতে পারেনি বাংলাদেশ। তাই ধারাবাহিকভাবে কমে আসছে বিদেশে কর্মী পাঠানো। আগের বছরের তুলনায় গত বছর প্রায় ৫ শতাংশ কর্মী কম গেছেন বিদেশে। তার আগের বছর কমেছিল ২৭ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, শিগগিরই মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বাংলাদেশের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বলছে, এ মাসের শেষের দিকে ঢাকায় দুই দেশের যৌথ কারিগরি কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এরপর সিদ্ধান্ত হতে পারে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বাংলাদেশের জন্য আদৌ খুলবে কিনা। বিএমইটির তথ্যমতে, ২০১৭ সালে মালয়েশিয়ায় গেছেন প্রায় ১ লাখ কর্মী। ২০১৮ সালেও দেশটিতে গেছেন ১ লাখ ৭৫ হাজার কর্মী। ওই বছরের সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশি কর্মী নেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। গত বছর দেশটিতে গেছেন মাত্র ৫৪৫ জন। একই অবস্থা বিরাজ করছে সৌদি আরবের শ্রমবাজারেও। এমন কি দুবাইয়ের শ্রমবাজারে সৃষ্টি হওয়া অচলাবস্থার অবসান কবে ঘটবে তা বলা মুশকিল। ১৯৭৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত সৌদি আরবে গেছেন ৪০ লাখের বেশি বাংলাদেশি কর্মী। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চসংখ্যক ২৩ লাখ ৭১ হাজার কর্মী গেছেন আরব আমিরাতে (দুবাই)।
তাই আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে আমাদের বিমানবন্দরে ভালোভাবে চেক করে বিদেশে যাত্রী পাঠানো হয়। যাতে আর কোনো দেশ আমাদের প্রবাসী নাগরিকদের ওপর এইভাবে নিষেধাজ্ঞা না দিতে পারে। এমনকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরও নজরদারি বাড়াতে হবে যাতে আর কেউ সাহেদের মতো কোভিড-১৯ ভুয়া নেগেটিভ সনদপত্র না দিতে পারে। সাহেদের মতো যারা এই ধরনের প্রতারণার সাথে জড়িত তাদেরকে চিহ্নিত করে বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এই সময়ে এ জাতীয় জনস্বাস্থ্যবিরোধী কাজের সকল তৎপরতাকে রুখে দিতে না পারলে তা হবে আমাদের জন্য চরম ব্যর্থতা। সরকারকে এ বিষয়ে তাই নিতে হবে যথার্থ এবং কার্যকরী পদক্ষেপ।
শুধু সরকারের দায়িত্ব রয়েছে এমন নয়, নাগরিক হিসেবে আমাদেরও দায়িত্ব আছে যাতে বিদেশ ভ্রমণের সময় আমরা অধিকতর সতর্ক এবং সচেতন হই। আমরা যেন ভুয়া রিপোর্টসহ অন্যান্য এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকি। মনে রাখবেন যে আপনি যখন বিদেশ ভ্রমণ করেন শুধু আপনাকে প্রতিনিধিত্ব করছেন না, আপনি বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছেন।
সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, দীর্ঘদিন ধরে নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। কার্যত তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। কেননা নতুন কয়েকটি শ্রমবাজারের সম্ভাবনা দেখা দিলেও সেখানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে না পারায় বাংলাদেশ এখনো পিছিয়েই রয়েছে নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টিতে।
অ আ আবীর আকাশ: লেখক কবি প্রাবন্ধিক কলামিস্ট ও সাংবাদিক।
সম্পাদক: আবীর আকাশ জার্নাল
ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

সমাজ পরিবর্তনে সাংবাদিকদের ভূমিকা অপরিসীম।

বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার কি ধ্বংস হওয়ার পথে!

আপডেট সময় ১১:১৩:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জুলাই ২০২০
বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার কি ধ্বংস হওয়ার পথে?
বাংলাদেশের শ্রমবাজার বহির্বিশ্বে প্রশ্নবোধক হতে চলেছে। সরকার দলীয় লোকজনেই অন্ধকার ডেকে আনছে। শীঘ্রই সামনে আসছে এ বিপদ। কেউ কেউ এতোটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে দেশ জাতির কথা না ভেবে নিজের স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে বিদেশে শ্রমবাজারে ধ্বংস করে দিচ্ছেন। মানব পাচারকারী শহীদ ইসলাম পাপুল, করোনার ভূয়া রিপোর্ট প্রদানকারী শাহেদ করিম এরা কি বাংলাদেশকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি ভেবে যাচ্ছেতাই কান্ড ঘটাচ্ছে। এদের কী শাস্তি হবে? অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে? এদের কারণে বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। প্রয়োজন অনুসারে নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টি করাও সম্ভব হচ্ছে না। ফলে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি বাড়লেও কমছে জনশক্তি রপ্তানি। এ পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার বিষয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বাড়ছে। কেননা টালমাটাল বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিও মন্দার মধ্য দিয়ে সময় পার করছে। যার প্রভাব থেকে মুক্ত নয় বাংলাদেশও। আর অন্যদিকে লোভী শ্রেণির অসাধু ও প্রতারক লোকের কারণে বিশ্বে আমাদের মান সম্মান নষ্ট হচ্ছে। ভুয়া কোভিড-১৯ নেগেটিভ রিপোর্ট বিক্রি হয়েছে এবং সেই রিপোর্ট নিয়ে আবার কিছু প্রবাসী বিদেশে গিয়ে কোভিড পজিটিভ হয়েছেন, তাদেরকে বিদেশের বিমানবন্দরে অবতরণ করতে অনুমতি না দেওয়ায় আবার দেশে ফেরত আসতে হচ্ছে, এর চেয়ে লজ্জার আর কি আছে! ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে জানতে পারি বাংলাদেশের সঙ্গে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত সব ফ্লাইট বাতিল করেছে ইতালি। এ সংক্রান্ত নোটিশ জারি করেছে ইতালি সরকার। ইতালির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বাংলাদেশ থেকে ইতালিগামী সব ফ্লাইট ও যাত্রী নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এখন থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত যে কোনো দেশের নাগরিক কিংবা যে কোনো দেশ হয়ে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া কোনো ফ্লাইট ইতালিতে অবতরণের অনুমতি পাবে না।
এই নিয়ে প্রবাসী শ্রমিকদের স্বজনরা যেমন উদ্বিগ্ন তেমনি মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজার নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। এরইমধ্যে শ্রমিক পাঠানো বন্ধ করতে বলেছে ইরাক।
বাংলাদেশের অর্থনীতির বিরাট ক্ষতি হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে কারণ দেশে আটকে পড়া কয়েক হাজার বাংলাদেশি প্রবাসী যারা ইতালিতে যেতে পারছেন না, তাদের চাকরি চলে যেতে পারে।এতে অবশ্যই আমাদের রেমিটেন্সের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ইতালি কঠোর লকডাউনের মাধ্যমে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করছে। আর সেখানে বাংলাদেশ থেকে গত কয়েকদিনে যত ফ্লাইট গিয়েছে তার প্রায় সবগুলোতেই কেউ না কেউ কোভিড-১৯ পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। ওখানে পরীক্ষায় যাদের করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে তারা সবাই বাংলাদেশ থেকে ভুয়া রিপোর্ট নিয়েছেন। এতে শুধু ইতালিতে নতুন করে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকা রয়েছে তাই নয় বরং বাংলাদেশি প্রবাসীদের মান সম্মানে বড় ধাক্কা নেমে আসবে মনে হচ্ছে। এতে আমাদের দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।
করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব এক কঠিন সময় অতিক্রম করছে। কখন এটা নিয়ন্ত্রণে আসবে সে সম্পর্কে কেউই কোনো নির্দিষ্ট ধারণা দিতে পারেনি। তারপরও এই করোনাভাইরাস থেকে আমাদেরকে রক্ষা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী কি না করে যাচ্ছেন। নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, জনসমাজে সেসব উদ্যোগ খুবই প্রশংসিত। তিনি বিভিন্ন সেক্টরের উৎপাদনশীলতা টিকিয়ে রাখতে বিশাল অঙ্কের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণাসহ দরিদ্র মানুষ এবং মেধাবী শিক্ষার্থীদেরকে ত্রাণ সহযোগিতার পাশাপাশি অর্থনীতির চাকা সচল রাখা এবং জীবিকার জন্য নিয়েছেন বিভিন্ন পরিকল্পনা। করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় দ্রুত বিভিন্ন যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য দেশে এবং বিদেশে প্রশংসিত হচ্ছেন শেখ হাসিনা।
কিন্তু অসৎ লোভী প্রতারক মানুষগুলোর কারণে বড় ধরনের সংকট ও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে দেশের শ্রমবাজার। মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, কুয়েত, ইতালিসহ কয়েকটি দেশ থেকে প্রবাসী শ্রমিকরা দেশে ফেরত আসছে। এমতাবস্থায় বিদেশে শ্রমবাজার সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার বিষয়ে সরকারের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। আমরা মনে করি প্রবাসী শ্রমিকদের বিষয়ে সরকারের যথাযথ কর্মসূচি থাকা আবশ্যক; বিশেষ করে নতুন শ্রমবাজার তৈরিতে সরকারকে দৃষ্টি দিতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম দেশ সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার ও ইউএই (দুবাই-আবুধাবি) থেকে কমপক্ষে ১৫ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিককে ফেরত পাঠানোর শঙ্কা প্রকাশ করছেন দেশগুলোতে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাস, প্রবাসী বাংলাদেশি ও অভিবাসন বিশ্লেষকরা। অন্যদিকে কুয়েত সরকার দেশে অভিবাসীদের সংখ্যা কমিয়ে আনতে একটি প্রবাসী কোটা বিল প্রণয়ন করেছে।
করোনাভাইরাসের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে এই আশংকায় কোনো এয়ারলাইন্স বাংলাদেশ থেকে কোনো যাত্রী নিতে পারবে না। এমনকি কোনো ট্রানজিট ফ্লাইটেও যাত্রী নেওয়া যাবে না, যারা বাংলাদেশ থেকে যাবে। কারণ বাংলাদেশ থেকে গত সোমবার ইতালিতে যাওয়া একটি বিশেষ ফ্লাইটে ২১ জন করোনাভাইরাস পজিটিভ শনাক্ত হয়। পরবর্তীতে দেশটির প্রভাবশালী প্রায় সব পত্রিকার প্রধান শিরোনামে নেতিবাচকভাবে বাংলাদেশের খবর প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট নিয়ে এই প্রবাসীরা ইতালিতে গেছেন বলে শিরোনামে উল্লেখ করা হয়েছে। দৈনিক পত্রিকায় শিরোনাম হয়েছে এভাবে ‘বাংলাদেশ থেকে ভুয়া করোনার সার্টিফিকেট’। এছাড়াও ইতালির পত্রিকার সম্পাদকীয় কলামেও লেখা প্রকাশ পেয়েছে যে বাংলাদেশি প্রবাসীদের ওপর ঐ দেশের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ যেন ভালোভাবে নজর রাখে। সাধারণ নাগরিকের মনে প্রশ্ন জাগে কিভাবে সাহেদের মত মানুষদেরকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করোনাভাইরাস চিকিৎসার অনুমতি দিল! স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিয়ে জনসমাজে নানা ধরনের মন্তব্য রয়েছে এবং এদের কার্যক্রম মানুষের নিকট কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। মানুষ বলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে ঢেলে সাজানো দরকার। অনেক দেশের সরকার প্রধান সঠিক ও যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হওয়ায় এবং অযৌক্তিক মন্তব্য দেওয়ায় নাগরিকের নিকট সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছেন, সেখানে আমাদের প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ফোর্বস ম্যাগাজিনসহ আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নেওয়া পদক্ষেপ এবং নেতৃত্বের কারণে আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। দক্ষতার সঙ্গে যেকোনো ষড়যন্ত্র এবং সংকট মোকাবিলা করা তার জন্য নতুন কিছু নয়। তারপরও নতুন করোনাভাইরাস মোকাবিলায়ও তিনি নিয়েছেন দ্রুত পদক্ষেপ। সেজন্য ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামও তার প্রশংসা করেছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিশ্বকে এক হয়ে করোনাভাইরাস মোকাবিলা করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। মার্চ মাসে ভিডিও কনফারেন্সে কোভিড-১৯ যুদ্ধে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে সার্কভুক্ত দেশের সরকার প্রধানদের আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
শ্রমবাজার এবং প্রবাসী শ্রমিকদের নিয়ে যারা কথা বলেন, কাজ করেন, তারা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি খারাপ হলে আমাদের শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং শ্রমবাজার দুটোই হুমকির মুখে পড়বে। করোনাভাইরাস সংকটে জনগণের পাশে আছেন এবং থাকবেন বলে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দেন দেশের সকল নাগরিককে। করোনাভাইরাস সংকট কাটিয়ে উঠতে প্রতি মুহূর্তের করণীয় ঠিক করতে দিনরাত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তাতে সবাই তার কার্যক্রমে আশান্বিত। তিনি সার্বক্ষণিক এ বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখছেন এবং প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী জীবন ও জীবিকা এই দুটি বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছেন যা সাধারণ নাগরিকের নিকট গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। ইতালিতে লকডাউনের শুরুর দিকে যারা বাংলাদেশে আসছিলেন তারাই এখন ইতালিতে যাচ্ছেন। চাকরি এবং জীবিকার জন্য অনেক বেশি টাকা খরচ করে বিশেষ ফ্লাইটের টিকিটে তারা গিয়েছেন। কিন্তু কিছু ধান্দাবাজ প্রতারকের জন্য এখন প্রবাসী সবাইকেই বিপদে পড়তে হলো। এমনকি আমাদের দেশে থেকে যাওয়া কেউ কোয়ারেন্টিন ভঙ্গ করলেই তিন মাসের কারাদণ্ড শাস্তি পেতে হবে। যেখানে আমাদের প্রবাসীরা কর্মঠ হওয়ায় বাংলাদেশের সুনাম ছিল, এখন ইতালির নাগরিকরা আমাদের সুনজরে দেখছে না। চীনের নাগরিকরাও ইতালিতে গত মার্চ মাসে বৈষম্যের শিকার হয়েছিল চীনের উহান থেকে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছে বলে। এখন আমাদের অনেক নাগরিকের সাথে সেরকমটা ঘটতে যাচ্ছে। করোনাভাইরাস টেস্ট করে বিভিন্ন সংস্থা ভুয়া রিপোর্ট দিল এবং সেই ভুয়া রিপোর্ট নিয়ে প্রবাসীরা যেভাবে বিদেশের বিমানবন্দরে ধরা পড়লেন, এতে করে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক ভাবে এবং বিদেশের মাটিতে আমাদের ভাবমূর্তি চরমভাবে নষ্ট হয়েছে যার প্রভাব খুব শীঘ্রই শেষ হবে না মনে হচ্ছে। যখন বিদেশের মাটিতে আমাদের পাসপোর্ট, লাগেজ, সার্টিফিকেট, ল্যাপটপ আমাদের টাই-স্যুট নানাভাবে চুলচেরা খোঁজাখুঁজি করবে তখন আমাদের লজ্জার সীমা থাকবে না! এর মানে জ্ঞান-বিজ্ঞান, চিন্তা চেতনা, আমাদের সংস্কৃতিসহ হাজারো জায়গায় কালিমার দাগ লেগে গেল কি? দেশের অর্থনীতির মূল সূচকগুলোতেও দেখা দিয়েছে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি। এতদিন রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি ও রপ্তানি আয় ইতিবাচক থাকলেও এখন তা ধরে রাখা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টিতে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকঢোল পেটালেও কার্যকর তেমন কোনো ফল পাওয়া যায়নি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষ কর্মী গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণকে গুরুত্ব দিয়ে আসছে সরকার ও বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো। এজন্য গাজীপুরে আন্তর্জাতিক মানের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করতে যাচ্ছে বায়রা। আগামী পাঁচ বছরে সাড়ে ৩ লাখ বিদেশি দক্ষ কর্মী নেবে জাপান। যা বাংলাদেশের জন্য একটা বড় সুযোগ বলে মনে করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি ইউরোপের​ দেশগুলোতেও দক্ষ কর্মী পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। জনশক্তি, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, মাত্র এক বছরের ব্যবধানে ৩৪ হাজার কর্মী কম গেছেন বিদেশে। অর্থাৎ ২০১৮ সালে ৭ লাখ ৩৪ হাজার ১৮১ জন কর্মী বিদেশে গেলেও ২০১৯ সালে গেছেন ৭ লাখ ১৫৯ জন কর্মী। সে হিসাবে ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে ৩৪ হাজার ২২ জন কম কর্মী বিদেশে গেছেন। শুধু তাই নয়, প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী ফেরতও আসছেন বিদেশ থেকে। বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ৬৫ হাজার ৩৭২ জন কর্মী ফেরত এসেছেন। আর ২০১৮ সালে ফেরত এসেছেন ৬৮ হাজার ৩৮২ জন কর্মী। শুধু মালয়েশিয়া থেকেই ফেরত এসেছেন ৫০ হাজার কর্মী। এর প্রধান কারণ দেখানো হয়েছে, ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া এবং চাকরি হারানো। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট দেশগুলো নানা কারণে কর্মীদের ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি না করায় বাধ্য হয়ে তাদের ফেরত আসতে হচ্ছে। ২০১৪ থেকে ২০১৯ গত ছয় বছরে সবচেয়ে বেশি কর্মী বিদেশে গেছেন ২০১৭ সালে। সে বছর বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গেছেন ১০ লাখ ৮ হাজার ৫২৫ জন কর্মী। আর সবচেয়ে কম গেছেন ২০১৪ সালে, ৪ লাখ ২৫ হাজার ৬৮৪ জন। অবশ্য সে বছর ফেরতও এসেছেন কম ৪৭ হাজার ২৬১ জন। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. শামছুল আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিশ্ববাজারে এখন দক্ষ কর্মীর চাহিদা বেশি। ফলে আমরা চেষ্টা করছি প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মীদের দক্ষ করে বিদেশে পাঠানোর। পাশাপাশি মালয়েশিয়া, কুয়েত, সৌদি আরব কিংবা দুবাই অর্থাৎ শুধু মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক নয়, বিশ্বের অন্যসব দেশেও কীভাবে দক্ষ কর্মী পাঠানো যায় সে চেষ্টাই আমরা করছি। এজন্য আমরা নতুন নতুন শ্রমবাজার খুঁজছি। যেমন জাপানেও আমরা দক্ষ কর্মী পাঠানো শুরু করেছি এবং দক্ষ কর্মীর একটা প্রভাব কিন্তু পড়তে শুরু করেছে। এজন্য শ্রমিক কম গেলেও রেমিট্যান্স কিন্তু বাড়ছে। সবমিলিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি সামনের দিনগুলোতে আশাব্যঞ্জক হবে বলে তিনি মনে করেন। এদিকে জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে বড় তিনটি শ্রমবাজারের মধ্যে দুটি দীর্ঘদিন যাবৎ প্রায় বন্ধ হয়ে আছে। এর মধ্যে ১৬ মাস ধরে বন্ধ মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। আর সাত বছর ধরে কর্মী পাঠানোয় গতি নেই সংযুক্ত আরব আমিরাতে। নতুন করে বড় কোনো শ্রমবাজারেও ঢুকতে পারেনি বাংলাদেশ। তাই ধারাবাহিকভাবে কমে আসছে বিদেশে কর্মী পাঠানো। আগের বছরের তুলনায় গত বছর প্রায় ৫ শতাংশ কর্মী কম গেছেন বিদেশে। তার আগের বছর কমেছিল ২৭ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, শিগগিরই মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বাংলাদেশের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বলছে, এ মাসের শেষের দিকে ঢাকায় দুই দেশের যৌথ কারিগরি কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এরপর সিদ্ধান্ত হতে পারে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বাংলাদেশের জন্য আদৌ খুলবে কিনা। বিএমইটির তথ্যমতে, ২০১৭ সালে মালয়েশিয়ায় গেছেন প্রায় ১ লাখ কর্মী। ২০১৮ সালেও দেশটিতে গেছেন ১ লাখ ৭৫ হাজার কর্মী। ওই বছরের সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশি কর্মী নেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। গত বছর দেশটিতে গেছেন মাত্র ৫৪৫ জন। একই অবস্থা বিরাজ করছে সৌদি আরবের শ্রমবাজারেও। এমন কি দুবাইয়ের শ্রমবাজারে সৃষ্টি হওয়া অচলাবস্থার অবসান কবে ঘটবে তা বলা মুশকিল। ১৯৭৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত সৌদি আরবে গেছেন ৪০ লাখের বেশি বাংলাদেশি কর্মী। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চসংখ্যক ২৩ লাখ ৭১ হাজার কর্মী গেছেন আরব আমিরাতে (দুবাই)।
তাই আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে আমাদের বিমানবন্দরে ভালোভাবে চেক করে বিদেশে যাত্রী পাঠানো হয়। যাতে আর কোনো দেশ আমাদের প্রবাসী নাগরিকদের ওপর এইভাবে নিষেধাজ্ঞা না দিতে পারে। এমনকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরও নজরদারি বাড়াতে হবে যাতে আর কেউ সাহেদের মতো কোভিড-১৯ ভুয়া নেগেটিভ সনদপত্র না দিতে পারে। সাহেদের মতো যারা এই ধরনের প্রতারণার সাথে জড়িত তাদেরকে চিহ্নিত করে বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এই সময়ে এ জাতীয় জনস্বাস্থ্যবিরোধী কাজের সকল তৎপরতাকে রুখে দিতে না পারলে তা হবে আমাদের জন্য চরম ব্যর্থতা। সরকারকে এ বিষয়ে তাই নিতে হবে যথার্থ এবং কার্যকরী পদক্ষেপ।
শুধু সরকারের দায়িত্ব রয়েছে এমন নয়, নাগরিক হিসেবে আমাদেরও দায়িত্ব আছে যাতে বিদেশ ভ্রমণের সময় আমরা অধিকতর সতর্ক এবং সচেতন হই। আমরা যেন ভুয়া রিপোর্টসহ অন্যান্য এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকি। মনে রাখবেন যে আপনি যখন বিদেশ ভ্রমণ করেন শুধু আপনাকে প্রতিনিধিত্ব করছেন না, আপনি বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছেন।
সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, দীর্ঘদিন ধরে নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। কার্যত তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। কেননা নতুন কয়েকটি শ্রমবাজারের সম্ভাবনা দেখা দিলেও সেখানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে না পারায় বাংলাদেশ এখনো পিছিয়েই রয়েছে নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টিতে।
অ আ আবীর আকাশ: লেখক কবি প্রাবন্ধিক কলামিস্ট ও সাংবাদিক।
সম্পাদক: আবীর আকাশ জার্নাল