ঢাকা ০৭:০০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

হবিগঞ্জের বাহুবলে হাওর উন্নয়ন প্রকল্পে চলছে লুটের মহোৎসব!

স্টাফ রিপোর্টারঃ হবিগঞ্জের বাহুবলে হাওর​ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় একটি সড়ক নির্মাণ কাজে চলছে লুটের মহোৎসব। অনিয়ম-দূর্ণীতির মাধ্যমে​ সরকারের কোটি টাকা আত্মসাতের অপচেষ্টা করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেছেন​ ​ ​ এলাকাবাসী।​ ​
জানা যায়,​ হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ইউনিয়নের বক্তারপুর গ্রামে​ “জাপান ইন্টারন্যাশনাল​ ​ কো-অপারেশন​ এজেন্সি” (জাইকা) এর অর্থায়নে হাওর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় চলছে একটি সড়ক নির্মাণ কাজ।​
২২ শত ৮০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩ মিটার​ প্রস্থের প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার এ কাজটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে “হাসান এন্টারপ্রাইজ” নামক একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। চলতি অর্থ বছরে কাজটি সম্পন্ন হবার কথা থাকলেও ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ২০/২৫​ শতাংশ কাজ। তবে এরইমধ্যে নানা অনিয়ম-দূর্ণীতির অভিযোগ উঠেছে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।​ ​
অভিযোগে প্রকাশ, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠাটি প্রভাবশালী হওয়ায়​ সরকারী সিডিউল এর কোন তোয়াক্কাই করছে না।​ কাজটির পরতে পরতে চলছে নানা অনিয়ম।​ ​
সরেজমিনে লক্ষ করা যায়,​ ঢালাইয়ে সিলিকা বালুর পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে মাটি । শ্রমিকরা নৌকা দিয়ে এ মাটি সংগ্রহ করছে​ পার্শ্ববর্তি হাওর থেকে। সি.সি ঢালাইয়ের মিক্সিংয়েও চলছে তুঘোলকি কান্ড। ৬.৩.১ (কংকিট, বালু ও সিমেন্ট) অনুপাতে ঢালাইয়ের মিশ্রন করার নিয়ম থাকলেও বাস্তবতা ভিন্ন।​ মিশ্রনকৃত ঢালাইয়ের কোন কোন স্থানে অণুবিক্ষন যন্ত্র দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ‘কংকিট’। ফলে কাজ শেষ হতে না হতেই ফেটে যাচ্ছে ঢালাই। এ অবস্থায় চৌকস শ্রমিকেরা “ফাঁটল ধরা সি.সি ঢালাই” ঢেকে দিচ্ছেন “আর.সি.সি ঢালাই” দিয়ে।
“সি.সি-আর.সি.সি” ঢালাইয়ের উচ্চতা নিয়েও করা হচ্ছে “নয়-ছয়”।​ বিশেষ কৌশলে দেয়া হচ্ছে শুভঙ্করের ফাঁকি। ১১ ইঞ্চি উচ্চতার ঢালাই করার কথা থাকলেও দু/একটি স্থান ছাড়া এর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না । সিডিউল​ অনুপাতে “সি.সি” ও “আর সি.সি” ঢালাই হবার কথা ছিল যথাক্রমে ৪+৭ ইঞ্চি।​ কিন্তু বাস্তবতা তার উল্টো।​ ​
শুধু তাই নয়, নির্মাণ শেষ হয়েছে এমন কিছু স্থান ঘুরে “আর.সি.সি” ঢালাইয়ে রডের চিহ্নও দেখা যায়নি।​ ​
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ইট,বালু,রড, সিমেন্টসহ সকল সামগ্রিই নিন্মমানের। ফলে নির্মাণ শেষ হবার ৬ মাসের মধ্যেই ভেঙ্গে যেতে পারে সড়কটি।​
তাদের অভিযোগ, গাইডওয়ালের উচ্চতাও সিডিউল অনুপাতে​ হয়নি।​ এখানেও উচ্চতা বাড়াতে অবলম্বন করা হয়েছে বিশেষ কৌশল।
শুধু তাই নয়,​ জনসাধারণের অবগতির জন্য প্রকল্প এলাকায় স্থাপন করা হয়নি “সিডিউল বোর্ড”। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে ঠিকাদারের ঘনিষ্টজন পরিচয়ধারী উজ্জল হোসেন নামে এক ব্যক্তি জানান, সাইনবোর্ড লেখার কাজ চলছে। আজ-কালই তা লাগানো হবে।​
জানতে চাইলে সাতকাপন​
ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের​ সদস্য আঃ করিম বলেন, “আমরা প্রথমে এ অনিয়মের প্রতিবাদ করেছি। ঠিকাদার আমাদের কথায় পাত্তাই দেন নি। তাই আমরা বাধ্য হয়ে উপজেলা নির্বাহী​ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছি”।​
তিনি বলেন, “লুটের মহোৎসব চলছে এখানে।​ চলছে কোটি টাকা আত্মসাতের অপচেষ্টা। আমরা কোন অবস্থাতেই চোখের সামনে সরকারের টাকা অপচয় হতে দেব না”।​
ইউপি চেয়ারম্যান শাহ মোঃ আব্দাল মিয়া বলেন,​ “অনিয়মের কথা শুনেছি। আমি নিজে গিয়ে দেখে যা করণীয় আছে তাই করব”।
এ বিষয়ে প্রকল্পের সাব-ঠিকাদার জিল্লুর রহমানের সাথে বার বার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কোন কথাই বলতে রাজি হননি। এমনকি তিনি তার প্রকল্পের নামটিও জানেন না বলে জানান।​ ​
তবে বাহুবল উপজেলা প্রকৌশলী আনিছুর রহমান ভূইয়া জানান ভিন্ন কথা।​ তার দাবী প্রকল্পের কাজ খুব ভাল ভাবেই চলছে।​
বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্নিগ্ধা তালুকদার বলেন,​ “আমি প্রকল্পটি দুইবার পরিদর্শন করে বিভিন্ন অনিয়ম দেখতে পেয়েছি এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এ বিষয়ে দরখাস্ত পেয়েছি, ব্যবস্থা গ্রহণ করব”।
ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

হবিগঞ্জের বাহুবলে হাওর উন্নয়ন প্রকল্পে চলছে লুটের মহোৎসব!

আপডেট সময় ০৩:৪৩:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ জুলাই ২০২০
স্টাফ রিপোর্টারঃ হবিগঞ্জের বাহুবলে হাওর​ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় একটি সড়ক নির্মাণ কাজে চলছে লুটের মহোৎসব। অনিয়ম-দূর্ণীতির মাধ্যমে​ সরকারের কোটি টাকা আত্মসাতের অপচেষ্টা করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেছেন​ ​ ​ এলাকাবাসী।​ ​
জানা যায়,​ হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ইউনিয়নের বক্তারপুর গ্রামে​ “জাপান ইন্টারন্যাশনাল​ ​ কো-অপারেশন​ এজেন্সি” (জাইকা) এর অর্থায়নে হাওর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় চলছে একটি সড়ক নির্মাণ কাজ।​
২২ শত ৮০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩ মিটার​ প্রস্থের প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার এ কাজটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে “হাসান এন্টারপ্রাইজ” নামক একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। চলতি অর্থ বছরে কাজটি সম্পন্ন হবার কথা থাকলেও ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ২০/২৫​ শতাংশ কাজ। তবে এরইমধ্যে নানা অনিয়ম-দূর্ণীতির অভিযোগ উঠেছে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।​ ​
অভিযোগে প্রকাশ, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠাটি প্রভাবশালী হওয়ায়​ সরকারী সিডিউল এর কোন তোয়াক্কাই করছে না।​ কাজটির পরতে পরতে চলছে নানা অনিয়ম।​ ​
সরেজমিনে লক্ষ করা যায়,​ ঢালাইয়ে সিলিকা বালুর পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে মাটি । শ্রমিকরা নৌকা দিয়ে এ মাটি সংগ্রহ করছে​ পার্শ্ববর্তি হাওর থেকে। সি.সি ঢালাইয়ের মিক্সিংয়েও চলছে তুঘোলকি কান্ড। ৬.৩.১ (কংকিট, বালু ও সিমেন্ট) অনুপাতে ঢালাইয়ের মিশ্রন করার নিয়ম থাকলেও বাস্তবতা ভিন্ন।​ মিশ্রনকৃত ঢালাইয়ের কোন কোন স্থানে অণুবিক্ষন যন্ত্র দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ‘কংকিট’। ফলে কাজ শেষ হতে না হতেই ফেটে যাচ্ছে ঢালাই। এ অবস্থায় চৌকস শ্রমিকেরা “ফাঁটল ধরা সি.সি ঢালাই” ঢেকে দিচ্ছেন “আর.সি.সি ঢালাই” দিয়ে।
“সি.সি-আর.সি.সি” ঢালাইয়ের উচ্চতা নিয়েও করা হচ্ছে “নয়-ছয়”।​ বিশেষ কৌশলে দেয়া হচ্ছে শুভঙ্করের ফাঁকি। ১১ ইঞ্চি উচ্চতার ঢালাই করার কথা থাকলেও দু/একটি স্থান ছাড়া এর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না । সিডিউল​ অনুপাতে “সি.সি” ও “আর সি.সি” ঢালাই হবার কথা ছিল যথাক্রমে ৪+৭ ইঞ্চি।​ কিন্তু বাস্তবতা তার উল্টো।​ ​
শুধু তাই নয়, নির্মাণ শেষ হয়েছে এমন কিছু স্থান ঘুরে “আর.সি.সি” ঢালাইয়ে রডের চিহ্নও দেখা যায়নি।​ ​
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ইট,বালু,রড, সিমেন্টসহ সকল সামগ্রিই নিন্মমানের। ফলে নির্মাণ শেষ হবার ৬ মাসের মধ্যেই ভেঙ্গে যেতে পারে সড়কটি।​
তাদের অভিযোগ, গাইডওয়ালের উচ্চতাও সিডিউল অনুপাতে​ হয়নি।​ এখানেও উচ্চতা বাড়াতে অবলম্বন করা হয়েছে বিশেষ কৌশল।
শুধু তাই নয়,​ জনসাধারণের অবগতির জন্য প্রকল্প এলাকায় স্থাপন করা হয়নি “সিডিউল বোর্ড”। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে ঠিকাদারের ঘনিষ্টজন পরিচয়ধারী উজ্জল হোসেন নামে এক ব্যক্তি জানান, সাইনবোর্ড লেখার কাজ চলছে। আজ-কালই তা লাগানো হবে।​
জানতে চাইলে সাতকাপন​
ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের​ সদস্য আঃ করিম বলেন, “আমরা প্রথমে এ অনিয়মের প্রতিবাদ করেছি। ঠিকাদার আমাদের কথায় পাত্তাই দেন নি। তাই আমরা বাধ্য হয়ে উপজেলা নির্বাহী​ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছি”।​
তিনি বলেন, “লুটের মহোৎসব চলছে এখানে।​ চলছে কোটি টাকা আত্মসাতের অপচেষ্টা। আমরা কোন অবস্থাতেই চোখের সামনে সরকারের টাকা অপচয় হতে দেব না”।​
ইউপি চেয়ারম্যান শাহ মোঃ আব্দাল মিয়া বলেন,​ “অনিয়মের কথা শুনেছি। আমি নিজে গিয়ে দেখে যা করণীয় আছে তাই করব”।
এ বিষয়ে প্রকল্পের সাব-ঠিকাদার জিল্লুর রহমানের সাথে বার বার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কোন কথাই বলতে রাজি হননি। এমনকি তিনি তার প্রকল্পের নামটিও জানেন না বলে জানান।​ ​
তবে বাহুবল উপজেলা প্রকৌশলী আনিছুর রহমান ভূইয়া জানান ভিন্ন কথা।​ তার দাবী প্রকল্পের কাজ খুব ভাল ভাবেই চলছে।​
বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্নিগ্ধা তালুকদার বলেন,​ “আমি প্রকল্পটি দুইবার পরিদর্শন করে বিভিন্ন অনিয়ম দেখতে পেয়েছি এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এ বিষয়ে দরখাস্ত পেয়েছি, ব্যবস্থা গ্রহণ করব”।