ঢাকা ১১:২৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সমাজ পরিবর্তনে সাংবাদিকদের ভূমিকা অপরিসীম। স্কানথর্পের নব নির্বাচিত এমপির সাথে নর্থ বাংলা প্রেসক্লাবের মতবিনিময়। স্কানথর্পের নব নির্বাচিত এমপির সাথে নর্থ বাংলা প্রেসক্লাবের মতবিনিময়। ম্যানচেস্টার সহকারী হাইকমিশনার এর সাথে নর্থ বাংলা প্রেসক্লাবের সৌজন্যে সাক্ষাৎ যুক্তরাজ্যের নর্থ-বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ফখরুল হোসাইনের সাথে বিশ্বনাথ মডেল প্রেসক্লাবের মতবিনিময় নর্থ বাংলা প্রেসক্লাব নর্থ বাংলা প্রেসক্লাব ইউকের আত্মপ্রকাশ, সভাপতি ফখরুল হোসাইন সম্পাদক নুরুল আমিন ৪০ কেজি ওজনের হলি রামাদ্বান ফ্যামেলি ফুড প্যাক বিতরণ করল আননিয়ামাহ উইমেন্স এডুকেশন ট্রাস্ট ইউ কে যুক্তরাজ্যের উইলশ্যায়ার কাউন্টির ডেপুটি লেফট্যানান্ট হলেন বিশ্বনাথের মাকরাম আলী আফরুজ যুক্তরাজ্যের উইলশ্যায়ার কাউন্টির ডেপুটি লেফট্যানান্ট হলেন বিশ্বনাথের মাকরাম আলী আফরুজ

হবিগঞ্জের বাহুবলে হাওর উন্নয়ন প্রকল্পে চলছে লুটের মহোৎসব!

স্টাফ রিপোর্টারঃ হবিগঞ্জের বাহুবলে হাওর​ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় একটি সড়ক নির্মাণ কাজে চলছে লুটের মহোৎসব। অনিয়ম-দূর্ণীতির মাধ্যমে​ সরকারের কোটি টাকা আত্মসাতের অপচেষ্টা করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেছেন​ ​ ​ এলাকাবাসী।​ ​
জানা যায়,​ হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ইউনিয়নের বক্তারপুর গ্রামে​ “জাপান ইন্টারন্যাশনাল​ ​ কো-অপারেশন​ এজেন্সি” (জাইকা) এর অর্থায়নে হাওর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় চলছে একটি সড়ক নির্মাণ কাজ।​
২২ শত ৮০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩ মিটার​ প্রস্থের প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার এ কাজটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে “হাসান এন্টারপ্রাইজ” নামক একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। চলতি অর্থ বছরে কাজটি সম্পন্ন হবার কথা থাকলেও ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ২০/২৫​ শতাংশ কাজ। তবে এরইমধ্যে নানা অনিয়ম-দূর্ণীতির অভিযোগ উঠেছে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।​ ​
অভিযোগে প্রকাশ, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠাটি প্রভাবশালী হওয়ায়​ সরকারী সিডিউল এর কোন তোয়াক্কাই করছে না।​ কাজটির পরতে পরতে চলছে নানা অনিয়ম।​ ​
সরেজমিনে লক্ষ করা যায়,​ ঢালাইয়ে সিলিকা বালুর পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে মাটি । শ্রমিকরা নৌকা দিয়ে এ মাটি সংগ্রহ করছে​ পার্শ্ববর্তি হাওর থেকে। সি.সি ঢালাইয়ের মিক্সিংয়েও চলছে তুঘোলকি কান্ড। ৬.৩.১ (কংকিট, বালু ও সিমেন্ট) অনুপাতে ঢালাইয়ের মিশ্রন করার নিয়ম থাকলেও বাস্তবতা ভিন্ন।​ মিশ্রনকৃত ঢালাইয়ের কোন কোন স্থানে অণুবিক্ষন যন্ত্র দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ‘কংকিট’। ফলে কাজ শেষ হতে না হতেই ফেটে যাচ্ছে ঢালাই। এ অবস্থায় চৌকস শ্রমিকেরা “ফাঁটল ধরা সি.সি ঢালাই” ঢেকে দিচ্ছেন “আর.সি.সি ঢালাই” দিয়ে।
“সি.সি-আর.সি.সি” ঢালাইয়ের উচ্চতা নিয়েও করা হচ্ছে “নয়-ছয়”।​ বিশেষ কৌশলে দেয়া হচ্ছে শুভঙ্করের ফাঁকি। ১১ ইঞ্চি উচ্চতার ঢালাই করার কথা থাকলেও দু/একটি স্থান ছাড়া এর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না । সিডিউল​ অনুপাতে “সি.সি” ও “আর সি.সি” ঢালাই হবার কথা ছিল যথাক্রমে ৪+৭ ইঞ্চি।​ কিন্তু বাস্তবতা তার উল্টো।​ ​
শুধু তাই নয়, নির্মাণ শেষ হয়েছে এমন কিছু স্থান ঘুরে “আর.সি.সি” ঢালাইয়ে রডের চিহ্নও দেখা যায়নি।​ ​
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ইট,বালু,রড, সিমেন্টসহ সকল সামগ্রিই নিন্মমানের। ফলে নির্মাণ শেষ হবার ৬ মাসের মধ্যেই ভেঙ্গে যেতে পারে সড়কটি।​
তাদের অভিযোগ, গাইডওয়ালের উচ্চতাও সিডিউল অনুপাতে​ হয়নি।​ এখানেও উচ্চতা বাড়াতে অবলম্বন করা হয়েছে বিশেষ কৌশল।
শুধু তাই নয়,​ জনসাধারণের অবগতির জন্য প্রকল্প এলাকায় স্থাপন করা হয়নি “সিডিউল বোর্ড”। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে ঠিকাদারের ঘনিষ্টজন পরিচয়ধারী উজ্জল হোসেন নামে এক ব্যক্তি জানান, সাইনবোর্ড লেখার কাজ চলছে। আজ-কালই তা লাগানো হবে।​
জানতে চাইলে সাতকাপন​
ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের​ সদস্য আঃ করিম বলেন, “আমরা প্রথমে এ অনিয়মের প্রতিবাদ করেছি। ঠিকাদার আমাদের কথায় পাত্তাই দেন নি। তাই আমরা বাধ্য হয়ে উপজেলা নির্বাহী​ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছি”।​
তিনি বলেন, “লুটের মহোৎসব চলছে এখানে।​ চলছে কোটি টাকা আত্মসাতের অপচেষ্টা। আমরা কোন অবস্থাতেই চোখের সামনে সরকারের টাকা অপচয় হতে দেব না”।​
ইউপি চেয়ারম্যান শাহ মোঃ আব্দাল মিয়া বলেন,​ “অনিয়মের কথা শুনেছি। আমি নিজে গিয়ে দেখে যা করণীয় আছে তাই করব”।
এ বিষয়ে প্রকল্পের সাব-ঠিকাদার জিল্লুর রহমানের সাথে বার বার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কোন কথাই বলতে রাজি হননি। এমনকি তিনি তার প্রকল্পের নামটিও জানেন না বলে জানান।​ ​
তবে বাহুবল উপজেলা প্রকৌশলী আনিছুর রহমান ভূইয়া জানান ভিন্ন কথা।​ তার দাবী প্রকল্পের কাজ খুব ভাল ভাবেই চলছে।​
বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্নিগ্ধা তালুকদার বলেন,​ “আমি প্রকল্পটি দুইবার পরিদর্শন করে বিভিন্ন অনিয়ম দেখতে পেয়েছি এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এ বিষয়ে দরখাস্ত পেয়েছি, ব্যবস্থা গ্রহণ করব”।
ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

সমাজ পরিবর্তনে সাংবাদিকদের ভূমিকা অপরিসীম।

হবিগঞ্জের বাহুবলে হাওর উন্নয়ন প্রকল্পে চলছে লুটের মহোৎসব!

আপডেট সময় ০৩:৪৩:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ জুলাই ২০২০
স্টাফ রিপোর্টারঃ হবিগঞ্জের বাহুবলে হাওর​ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় একটি সড়ক নির্মাণ কাজে চলছে লুটের মহোৎসব। অনিয়ম-দূর্ণীতির মাধ্যমে​ সরকারের কোটি টাকা আত্মসাতের অপচেষ্টা করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেছেন​ ​ ​ এলাকাবাসী।​ ​
জানা যায়,​ হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ইউনিয়নের বক্তারপুর গ্রামে​ “জাপান ইন্টারন্যাশনাল​ ​ কো-অপারেশন​ এজেন্সি” (জাইকা) এর অর্থায়নে হাওর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় চলছে একটি সড়ক নির্মাণ কাজ।​
২২ শত ৮০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩ মিটার​ প্রস্থের প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার এ কাজটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে “হাসান এন্টারপ্রাইজ” নামক একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। চলতি অর্থ বছরে কাজটি সম্পন্ন হবার কথা থাকলেও ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ২০/২৫​ শতাংশ কাজ। তবে এরইমধ্যে নানা অনিয়ম-দূর্ণীতির অভিযোগ উঠেছে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।​ ​
অভিযোগে প্রকাশ, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠাটি প্রভাবশালী হওয়ায়​ সরকারী সিডিউল এর কোন তোয়াক্কাই করছে না।​ কাজটির পরতে পরতে চলছে নানা অনিয়ম।​ ​
সরেজমিনে লক্ষ করা যায়,​ ঢালাইয়ে সিলিকা বালুর পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে মাটি । শ্রমিকরা নৌকা দিয়ে এ মাটি সংগ্রহ করছে​ পার্শ্ববর্তি হাওর থেকে। সি.সি ঢালাইয়ের মিক্সিংয়েও চলছে তুঘোলকি কান্ড। ৬.৩.১ (কংকিট, বালু ও সিমেন্ট) অনুপাতে ঢালাইয়ের মিশ্রন করার নিয়ম থাকলেও বাস্তবতা ভিন্ন।​ মিশ্রনকৃত ঢালাইয়ের কোন কোন স্থানে অণুবিক্ষন যন্ত্র দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ‘কংকিট’। ফলে কাজ শেষ হতে না হতেই ফেটে যাচ্ছে ঢালাই। এ অবস্থায় চৌকস শ্রমিকেরা “ফাঁটল ধরা সি.সি ঢালাই” ঢেকে দিচ্ছেন “আর.সি.সি ঢালাই” দিয়ে।
“সি.সি-আর.সি.সি” ঢালাইয়ের উচ্চতা নিয়েও করা হচ্ছে “নয়-ছয়”।​ বিশেষ কৌশলে দেয়া হচ্ছে শুভঙ্করের ফাঁকি। ১১ ইঞ্চি উচ্চতার ঢালাই করার কথা থাকলেও দু/একটি স্থান ছাড়া এর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না । সিডিউল​ অনুপাতে “সি.সি” ও “আর সি.সি” ঢালাই হবার কথা ছিল যথাক্রমে ৪+৭ ইঞ্চি।​ কিন্তু বাস্তবতা তার উল্টো।​ ​
শুধু তাই নয়, নির্মাণ শেষ হয়েছে এমন কিছু স্থান ঘুরে “আর.সি.সি” ঢালাইয়ে রডের চিহ্নও দেখা যায়নি।​ ​
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ইট,বালু,রড, সিমেন্টসহ সকল সামগ্রিই নিন্মমানের। ফলে নির্মাণ শেষ হবার ৬ মাসের মধ্যেই ভেঙ্গে যেতে পারে সড়কটি।​
তাদের অভিযোগ, গাইডওয়ালের উচ্চতাও সিডিউল অনুপাতে​ হয়নি।​ এখানেও উচ্চতা বাড়াতে অবলম্বন করা হয়েছে বিশেষ কৌশল।
শুধু তাই নয়,​ জনসাধারণের অবগতির জন্য প্রকল্প এলাকায় স্থাপন করা হয়নি “সিডিউল বোর্ড”। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে ঠিকাদারের ঘনিষ্টজন পরিচয়ধারী উজ্জল হোসেন নামে এক ব্যক্তি জানান, সাইনবোর্ড লেখার কাজ চলছে। আজ-কালই তা লাগানো হবে।​
জানতে চাইলে সাতকাপন​
ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের​ সদস্য আঃ করিম বলেন, “আমরা প্রথমে এ অনিয়মের প্রতিবাদ করেছি। ঠিকাদার আমাদের কথায় পাত্তাই দেন নি। তাই আমরা বাধ্য হয়ে উপজেলা নির্বাহী​ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছি”।​
তিনি বলেন, “লুটের মহোৎসব চলছে এখানে।​ চলছে কোটি টাকা আত্মসাতের অপচেষ্টা। আমরা কোন অবস্থাতেই চোখের সামনে সরকারের টাকা অপচয় হতে দেব না”।​
ইউপি চেয়ারম্যান শাহ মোঃ আব্দাল মিয়া বলেন,​ “অনিয়মের কথা শুনেছি। আমি নিজে গিয়ে দেখে যা করণীয় আছে তাই করব”।
এ বিষয়ে প্রকল্পের সাব-ঠিকাদার জিল্লুর রহমানের সাথে বার বার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কোন কথাই বলতে রাজি হননি। এমনকি তিনি তার প্রকল্পের নামটিও জানেন না বলে জানান।​ ​
তবে বাহুবল উপজেলা প্রকৌশলী আনিছুর রহমান ভূইয়া জানান ভিন্ন কথা।​ তার দাবী প্রকল্পের কাজ খুব ভাল ভাবেই চলছে।​
বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্নিগ্ধা তালুকদার বলেন,​ “আমি প্রকল্পটি দুইবার পরিদর্শন করে বিভিন্ন অনিয়ম দেখতে পেয়েছি এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এ বিষয়ে দরখাস্ত পেয়েছি, ব্যবস্থা গ্রহণ করব”।