মো.আজিজুল ইসলাম: করোনা ভাইরাসের ভয়ংকর প্রভাব আমাদের অর্থনীতিতে পড়বে এটা অবধারিত ছিল। বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতে এর প্রভাব এখন দৃশ্যমান। আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতিতে করোনার এই বিপুল প্রভাবের জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। আজ আমি আমাদের প্রান্তিক অর্থনীতিতে এবং প্রান্তিক ব্যাংকিং কার্যক্রমে করোনার নেতিবাচক প্রভাব গুলোর উপর আলোকপাত করব।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ব্যাংকের আমানত বৃদ্ধিতে এবং ঋণ বিতরনে ব্যাপকভাবে প্রভাব পড়েছে। এই সংক্রমণের কারণে প্রত্যেকটা ব্যবসার নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। প্রাদুর্ভাব শুরু থেকে অধিকাংশ ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলতে পারেনি, যার ফলে উনারা কোন ব্যবসা করতে পারেন নি, অনুরূপভাবে, কোন প্রকার মুনাফা করতে পারেন নি। ব্যবসার মুনাফার কিছু অংশ বেশিরভাগ ব্যাবসায়ী মাসিক আমানত হিসাবে ব্যাংকে গচ্ছিত রাখেন, এতে করে ব্যাংক প্রতিমাসে একটা ভাল আমানত মাসিক সঞয় হিসাবে সংগ্রহ করে থাকে এবং যাদের ব্যাংক লোন আছে, তারা কিস্তির টাকা পরিশোধ করে থাকে। ব্যাংক প্রতিমাসে নতুন নতুন ঋণ বিতরণ করে থাকে, এখন নতুন ঋণ বিতরণ দুরে থাক, আগের লোনের কিস্তি গুলো আদায় করা ব্যাংকে জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্তিক বাজারে কিছু ভাসমান ব্যবসায়ী থাকে, যারা বিভিন্ন গ্রাম থেকে ক্ষুদ্র কৃষকের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রকারে শাক-সবজি, ফল-মূল সংগ্রহ করে, বাজারে বিক্রি করে। এই ভাসমান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীও তাদের এই অল্প আয়ের একটি অংশ প্রতি মাসে মাসিক সঞয়ী আমানত হিসাবে বিভিন্ন বানিজ্যিক ব্যাংকের প্রান্তিক শাখাগুলোতে সঞয় করে রাখেন, কিন্তু এই প্রাদুর্ভাবকালীন সময়ে তাদের পক্ষে গ্রামে গ্রামে ঘুরে শাক-সবজি এবং ফল-মূল সংগ্রহ করা সম্ভবপর নয়, যার ফলে প্রান্তিক শাখাগুলো এই প্রকারে আমানত পাচ্ছে না।
ব্যাংকে প্রান্তিক শাখাগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ফরেন রেমিট্যান্স আসে। ব্যাংক এই সব ফরেন রেমিট্যান্স থেকে শুধু যে কমিশন আয় পাই তা নয়, এই রেমিট্যান্সের সুবিধাভোগী ব্যাক্তি তাদের প্রাপ্ত রেমিট্যান্সের একটি অংশ প্রতিমাসে মাসিক সঞয় আমানত হিসাবে ব্যাংক জমা রাখেন, যেহেতু করোনা মহামারী একটি বৈশ্বিক সমস্যা, তাই আমাদের ফরেন রেমিট্যান্সের উপর এর প্রভাব খুবই দৃশ্যমান, যার ফলে আমাদের রেমিট্যান্সের পরিমাণ কমে গেছে, তার সাথে সাথে তার থেকে প্রাপ্ত মাসিক আমানতের পরিমাণও কমে গেছে।
যারা বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে কিংবা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত ছিলো তারা বেশিরভাগই এখন বেকার যেমন, বিভিন্ন কোচিং সেন্টার, প্রি-প্রাইমারী স্কুল, প্রান্তিক ডিলার প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান গুলোর মাসিক বেতনের একাউন্ট বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা হতে পরিচালিত হয়। প্রতিষ্ঠানগুলোর চাকরিজীবীরা প্রতিমাসে বেতনের একটি অংশ, তাদের ভবিষ্যতে জন্য মাসিক আমানত হিসাবে ব্যাংকে গচ্ছিত রাখেন, এই বিপুল পরিমাণ আমানত থেকে প্রান্তিক শাখাগুলো বঞ্জিত হচ্ছে। পাশাপাশি উক্ত প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদের ব্যাংকগুলো সহজ শর্ততে লোন প্রদান করে, প্রতিমাসে ভাল একটা সুদ আয় আদায় করে থাকে। এখন তো লোন প্রদান করা দূরের কথা, পক্ষান্তরে আগে দেওয়া লোনগুলো আদায় করা বড় সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। কারণ উনাদের মাসিক আয়ের উৎসই বন্ধ হয়ে গেছে।
বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্তিক বাজারে প্রচুর সংখ্যক সেলুন এবং মেয়েদের বিউটি পার্লার রয়েছে। এবং এখন প্রত্যেকেই রূপচর্চার ব্যাপারে সচেতন, তাই এই সব সেলুন এবং বিউটি পার্লারে মাস শেষে ভাল একটা আয় হয়, যা থেকে এই প্রতিষ্ঠানগুলো মালিক এবং কর্মচারী মোটামুটি ভাল টাকা সঞয় করতে পারেন, এবং যা ব্যাংকের প্রান্তিক শাখাগুলোতে আমানত সংগ্রহে আবদান রাখে। এই প্রাদুর্ভাব কালীন সময়ে এই সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলতে পারছে না। তাই এই খাতের আমানত সংগ্রহ বন্ধ আছে।
ব্যাংকিং খাতের সাথে জড়িত থাকা মানুষগুলো করোনার মধ্যেও কাজ থামিয়ে রাখেননি বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে দ্বিগুণ পরিশ্রম করতে হচ্ছে শুধুমাত্র ব্যাংকের মানস্মত গ্রাহক সেবা প্রদানের স্বার্থে। যাতে করে এই করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব কালীন সময়ে ব্যাংকের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা যায়।
লেখক:
শাখা ব্যবস্থাপক
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড
বিশ্বনাথ শাখা, সিলেট