ঢাকা ১০:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সমাজ পরিবর্তনে সাংবাদিকদের ভূমিকা অপরিসীম। স্কানথর্পের নব নির্বাচিত এমপির সাথে নর্থ বাংলা প্রেসক্লাবের মতবিনিময়। স্কানথর্পের নব নির্বাচিত এমপির সাথে নর্থ বাংলা প্রেসক্লাবের মতবিনিময়। ম্যানচেস্টার সহকারী হাইকমিশনার এর সাথে নর্থ বাংলা প্রেসক্লাবের সৌজন্যে সাক্ষাৎ যুক্তরাজ্যের নর্থ-বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ফখরুল হোসাইনের সাথে বিশ্বনাথ মডেল প্রেসক্লাবের মতবিনিময় নর্থ বাংলা প্রেসক্লাব নর্থ বাংলা প্রেসক্লাব ইউকের আত্মপ্রকাশ, সভাপতি ফখরুল হোসাইন সম্পাদক নুরুল আমিন ৪০ কেজি ওজনের হলি রামাদ্বান ফ্যামেলি ফুড প্যাক বিতরণ করল আননিয়ামাহ উইমেন্স এডুকেশন ট্রাস্ট ইউ কে যুক্তরাজ্যের উইলশ্যায়ার কাউন্টির ডেপুটি লেফট্যানান্ট হলেন বিশ্বনাথের মাকরাম আলী আফরুজ যুক্তরাজ্যের উইলশ্যায়ার কাউন্টির ডেপুটি লেফট্যানান্ট হলেন বিশ্বনাথের মাকরাম আলী আফরুজ

সিলেটে বেসরকারি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসায় গলাকাটা বিল

মাসুদ আহমদ রনি:  সিলেটে বেসরকারি দুটি হাসপাতালে করোনা আইসোলেশন সেন্টারে রোগিদের কাছ থেকে অস্বাভাবিক বিল নেয়া হচ্ছে বলে ক্রমাগত অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।  টাইম নিউজ ইউকে বিডি এর অনুসন্ধানে সেসব অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও বলছে, বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে, সময়মত ব্যবস্থা নেয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে।

সিলেটে সরকারি শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে স্থান সংকুলান না হওয়ার প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি বেসরকারি নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মাউন্ট এডোরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করোনা রোগিদের জন্য আলাদা ইউনিট খুলে। কিন্তু শুরু থেকেই এ দুটি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসায় অস্বাভাবিক বিল আদায়ের অভিযোগ ওঠে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ৫/৬ দিন আইসোলেশনে রেখে রোগিদের কাছ থেকে ৫০/৬০ হাজার এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা বিল আদায়ের অভিযোগ পাওয়া যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আইসিইউ সাপোর্ট ছাড়াই শুধুমাত্র ওয়ার্ড কিংবা কেবিনে আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিয়েই রোগিদের বিল গুনতে হচ্ছে ৫০ হাজার থেকে দেড় লক্ষ টাকা। আর আইসিইউ সাপোর্ট গ্রহণকারী রোগিদের বেলায় বিল দাঁড়াচ্ছে কয়েক লাখ টাকা। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ হারে বিল আদায় সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক এবং অনৈতিক। চিকিৎসা সুবিধার অপ্রতুলতার সুযোগে রোগিদের রীতিমত ফাঁদে ফেলে এমন অমানবিক আচরণে মেতেছে হাসপাতাল দুটি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত সপ্তাহে করোনা উপসর্গ নিয়ে মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি হন মৌলভীবাজারের এক নারী। ৬ দিন কেবিনে থেকে চিকিৎসা নিয়ে তাকে বিল পরিশোধ করতে হয়েছে এক লাখ চল্লিশ হাজার টাকা। একই সময়ে মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটে ভর্তি হয়ে এক সপ্তাহ চিকিৎসাধীন থেকে মারা যান সদর উপজেলার এক রোগি। তার স্বজনদের বিল গুনতে হয়েছে চার লাখ টাকা।
একই অবস্থা নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ৪ দিন মাকে কেবিনে রেখে চিকিৎসা নিয়ে বিশেষ ছাড়সহ ৫৫ হাজার টাকা বিল পরিশোধ করে ফেসবুকে করুন স্ট্যাটাস দিয়েছেন এক ছাত্রদল নেতা। সদর উপজেলার আরেক নারী ৬ দিন আইসিইউ সাপোর্টে থেকে আড়াই লাখ টাকা বিল দিয়েছেন।
এ বিষয়ে, জানতে চাইলে দুই হাসপাতালেরই কর্তা ব্যক্তিরা এসব বিলকে অস্বাভাবিক মানতে নারাজ।
নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করেনা ইউনিটের সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, সুরক্ষা সরঞ্জামসহ চিকিৎসা সামগ্রীর দাম বেশি হওয়ায় রোগিদের কাছ থেকে এমন বিল নিতে হচ্ছে তাদের। এছাড়া, ঝুঁকিভাতা হিসেবে ডাক্তার ও ক্লিনিক্যাল স্টাফদের অতিরিক্ত টাকা দিতে হয় বলেও দাবী তাদের।
মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের গণসংযোগ কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামের দাবী করোনা চিকিৎসা এমনিতেই ব্যায়বহুল। এজন্যই বিল বেশি নেয়া হচ্ছে। তবে এমন বিলকে মাতরাতিরিক্ত মানতে নারাজ তিনি।
যদিও, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন করোনা চিকিৎসায় আইসিইউ ছাড়া যেসব ওষুধ দেয়া হয় তার মূল্য খুবই অল্প। অন্যান্য রোগের তুলনায় করোনার চিকিৎসা ব্যায় খুবই অল্প বলে জানান তারা।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, করোনা চিকিৎসার নামে রোগীদের প্রতি রীতিমতো জুলুম শুরু করে দিয়েছে এ দুই বেসরকারি হাসপাতাল। সুরক্ষা সামগ্রীর অজুহাতে এ ধরণের অস্বাভাবিক বিল নেয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, পিপিইসহ অন্যান্য সুরক্ষা সামগ্রীর দাম কত তা সাধারণ মানুষের অজানা নয়। বিপদের সময় এমন অমানবিক আচরণ ডাক্তার সম্প্রদায়ের কাছে মানুষ আশা করে না বলেও মত দেন ডা. হিমাংশু।

এদিকে, বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে, কিন্তু এখনই কোন পদক্ষেপে যাওয়া যাচ্ছে না। কেননা, করোনা চিকিৎসা কেন্দ্রের অপ্রতুলতা রয়েছে সিলেটে। তবে, এমনটি বেশিদিন চলতে দেয়া হবে না বলে জানান তিনি। ডা. আনিস বলেন, সময়মত সবকিছুই একটা নিয়ন্ত্রণের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

সমাজ পরিবর্তনে সাংবাদিকদের ভূমিকা অপরিসীম।

সিলেটে বেসরকারি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসায় গলাকাটা বিল

আপডেট সময় ০১:২৯:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ জুন ২০২০

মাসুদ আহমদ রনি:  সিলেটে বেসরকারি দুটি হাসপাতালে করোনা আইসোলেশন সেন্টারে রোগিদের কাছ থেকে অস্বাভাবিক বিল নেয়া হচ্ছে বলে ক্রমাগত অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।  টাইম নিউজ ইউকে বিডি এর অনুসন্ধানে সেসব অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও বলছে, বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে, সময়মত ব্যবস্থা নেয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে।

সিলেটে সরকারি শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে স্থান সংকুলান না হওয়ার প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি বেসরকারি নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মাউন্ট এডোরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করোনা রোগিদের জন্য আলাদা ইউনিট খুলে। কিন্তু শুরু থেকেই এ দুটি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসায় অস্বাভাবিক বিল আদায়ের অভিযোগ ওঠে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ৫/৬ দিন আইসোলেশনে রেখে রোগিদের কাছ থেকে ৫০/৬০ হাজার এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা বিল আদায়ের অভিযোগ পাওয়া যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আইসিইউ সাপোর্ট ছাড়াই শুধুমাত্র ওয়ার্ড কিংবা কেবিনে আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিয়েই রোগিদের বিল গুনতে হচ্ছে ৫০ হাজার থেকে দেড় লক্ষ টাকা। আর আইসিইউ সাপোর্ট গ্রহণকারী রোগিদের বেলায় বিল দাঁড়াচ্ছে কয়েক লাখ টাকা। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ হারে বিল আদায় সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক এবং অনৈতিক। চিকিৎসা সুবিধার অপ্রতুলতার সুযোগে রোগিদের রীতিমত ফাঁদে ফেলে এমন অমানবিক আচরণে মেতেছে হাসপাতাল দুটি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত সপ্তাহে করোনা উপসর্গ নিয়ে মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি হন মৌলভীবাজারের এক নারী। ৬ দিন কেবিনে থেকে চিকিৎসা নিয়ে তাকে বিল পরিশোধ করতে হয়েছে এক লাখ চল্লিশ হাজার টাকা। একই সময়ে মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটে ভর্তি হয়ে এক সপ্তাহ চিকিৎসাধীন থেকে মারা যান সদর উপজেলার এক রোগি। তার স্বজনদের বিল গুনতে হয়েছে চার লাখ টাকা।
একই অবস্থা নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ৪ দিন মাকে কেবিনে রেখে চিকিৎসা নিয়ে বিশেষ ছাড়সহ ৫৫ হাজার টাকা বিল পরিশোধ করে ফেসবুকে করুন স্ট্যাটাস দিয়েছেন এক ছাত্রদল নেতা। সদর উপজেলার আরেক নারী ৬ দিন আইসিইউ সাপোর্টে থেকে আড়াই লাখ টাকা বিল দিয়েছেন।
এ বিষয়ে, জানতে চাইলে দুই হাসপাতালেরই কর্তা ব্যক্তিরা এসব বিলকে অস্বাভাবিক মানতে নারাজ।
নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করেনা ইউনিটের সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, সুরক্ষা সরঞ্জামসহ চিকিৎসা সামগ্রীর দাম বেশি হওয়ায় রোগিদের কাছ থেকে এমন বিল নিতে হচ্ছে তাদের। এছাড়া, ঝুঁকিভাতা হিসেবে ডাক্তার ও ক্লিনিক্যাল স্টাফদের অতিরিক্ত টাকা দিতে হয় বলেও দাবী তাদের।
মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের গণসংযোগ কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামের দাবী করোনা চিকিৎসা এমনিতেই ব্যায়বহুল। এজন্যই বিল বেশি নেয়া হচ্ছে। তবে এমন বিলকে মাতরাতিরিক্ত মানতে নারাজ তিনি।
যদিও, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন করোনা চিকিৎসায় আইসিইউ ছাড়া যেসব ওষুধ দেয়া হয় তার মূল্য খুবই অল্প। অন্যান্য রোগের তুলনায় করোনার চিকিৎসা ব্যায় খুবই অল্প বলে জানান তারা।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, করোনা চিকিৎসার নামে রোগীদের প্রতি রীতিমতো জুলুম শুরু করে দিয়েছে এ দুই বেসরকারি হাসপাতাল। সুরক্ষা সামগ্রীর অজুহাতে এ ধরণের অস্বাভাবিক বিল নেয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, পিপিইসহ অন্যান্য সুরক্ষা সামগ্রীর দাম কত তা সাধারণ মানুষের অজানা নয়। বিপদের সময় এমন অমানবিক আচরণ ডাক্তার সম্প্রদায়ের কাছে মানুষ আশা করে না বলেও মত দেন ডা. হিমাংশু।

এদিকে, বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে, কিন্তু এখনই কোন পদক্ষেপে যাওয়া যাচ্ছে না। কেননা, করোনা চিকিৎসা কেন্দ্রের অপ্রতুলতা রয়েছে সিলেটে। তবে, এমনটি বেশিদিন চলতে দেয়া হবে না বলে জানান তিনি। ডা. আনিস বলেন, সময়মত সবকিছুই একটা নিয়ন্ত্রণের আওতায় নিয়ে আসা হবে।