ঈদের পর গত এক সপ্তাহে রাজধানীর বাজারগুলোতে আলু, পটল, বরবটি, ঢেঁড়স, ধুন্দল, ঝিঙে, করলা, পেঁপেসহ বেশিরভাগ সবজির দাম বেড়েছে। তবে কমেছে পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দাম। অপরিবর্তিত রয়েছে মাছ, ডিম, মুরগি, গরু ও খাসির মাংসের দাম।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের পর প্রথম দিকে সবজি চাহিদা কম ছিল। তবে কয়েকদিন ধরে চাহিদা কিছুটা বেড়েছে। এছাড়া বৃষ্টিতে সবজির কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে সবজির দাম এখন কিছুটা বাড়তি। সামনে সবজির দাম আরও বাড়তে পারে।
সবজির পাশাপাশি কিছুটা দাম বেড়েছে কাঁচা মরিচের। রোজার ভেতরে ও ঈদের পর কিছু দিন ২০-৩০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকা হয়েছে। কোনো কোনো ব্যবসায়ী ২৫০ গ্রাম কাঁচা মরিচ ২০ টাকায় বিক্রি করছেন।
খিলগাঁওয়ে ২০ টাকা পোয়া কাঁচা মরিচ বিক্রি করা ব্যবসায়ী আশরাফ বলেন, বৃষ্টিতে মরিচের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সে তুলনায় দাম খুব একটা বাড়েনি। করোনার কারণে বাজারে এখনও সবকিছুর চাহিদা কম রয়েছে। একটু চাহিদা বাড়লেই সবকিছুর দাম আরও বেড়ে যাবে।
তিনি বলেন, প্রতি বছর রমজানের ভেতরে কাঁচা মরিচ ও শসার বাড়তি চাহিদা থাকে। ফলে দামও বাড়ে। কিন্তু এবার রমজানে আমরা ভিন্ন চিত্র দেখেছি। রমজানের ভেতর কাঁচা মরিচ ২০-৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। শসার কেজি বিক্রি হয়েছে ১৫-২০ টাকা।
এ ব্যবসায়ী আরও বলেন, তবে কম দামে কাঁচা মরিচ ও শসা খাওয়ার দিন শেষ হয়ে আসছে। ইতোমধ্যে ১০ টাকা বিক্রি হওয়া কাঁচা মরিচের পোয়া ২০ টাকা হয়েছে। ২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া শসার দাম বেড়ে ৫০ টাকা হয়েছে।
এদিকে শুক্রবার বিভিন্ন কাঁচাবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাকা টমেটো, গাজর, পটল, ঝিঙে, ধুন্দল, বরবটি, পেঁপেসহ প্রায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। তবে রোজার ভেতর ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া বেগুনের দাম কমে ৩০ থেকে ৪০ টাকা হয়েছে।
রোজার ভেতর ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া গাজরের দাম বেড়ে হয়েছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পাকা টমেটোর দাম বেড়ে হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। এছাড়া ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া চিচিঙ্গার দাম বেড়ে হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পেঁপের দাম বেড়ে হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া গোল আলুর দাম বেড়ে ২৮ থেকে ৩৫ টাকা হয়েছে।
বাজার ও মান ভেদে পটল বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগেও বিভিন্ন বাজারে ৩০ টাকা কেজি পাওয়া যাচ্ছিল। ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া করলার দাম বেড়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকা হয়েছে। বরবটি পাওয়া যাচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে কচুর লতি, কচুর মুখী, ধুন্দল, ঝিঙে ও কাকরোল। ঝিঙে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কচুর লতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কচুর মুখী ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কাকরোল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, ঢেঁড়স ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এ সবজিগুলোর দাম সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে।
সবজির দাম বাড়ার বিষয়ে মালিবাগ হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী শরিফ বলেন, ঈদের আগেই ঘূর্ণিঝড় ও বৃষ্টির কারণে সবজির বেশ ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু ঈদের পর কিছুদিন সবজির চাহিদা ছিল না। এ কারণে ঈদের পর সবজির দাম বাড়েনি। কিন্তু এখন আস্তে আস্তে সবজির চাহিদা বাড়ছে ফলে দামও বাড়ছে।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের ভয়কে দূরে ঠেলে মানুষ বাইরে বের হচ্ছে। আগের তুলনায় এখন বাজারে মানুষের আনাগোনা বেড়েছে। বিক্রিও তুলনামূলক বেড়েছে। ব্যবস্থা থাকলে কিছুদিনের মধ্যেই সব ধরনের সবজির দাম আরও বাড়বে।
এদিকে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে মুরগি, গরু ও খাসির মাংস। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। লাল লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। পাকিস্তানি কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা কেজি। দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি। গরুর মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা। আর খাসির মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা।
ঈদের আগে দাম বাড়া পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দাম গত সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা কমেছে। দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৯ থেকে ৪৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। দেশি রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা, যা গত সপ্তাহে দেড়শ টাকার ওপরে ছিল। আদার দাম কমে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ১৮০ থেকে ২০০ টাকা।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, আগের মতোই রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০-৫০০ টাকা। নলা (ছোট রুই) মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৬০-২০০ টাকা কেজি। তেলাপিয়া ১৩০-১৭০ টাকা, পাঙাশ ১৪০-১৮০ টাকা কেজি, শিং ৩০০-৪৫০ টাকা, শোল মাছ ৪০০-৭৫০ টাকা, পাবদা ৪৫০-৬০০ টাকা, বোয়াল ৫০০-৮০০ টাকা, টেংরা ৪৫০-৬০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৬ টাকা কেজি, মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৬ টাকা, মোটা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৬ থেকে ৪০ টাকা।